বাংলাদেশ

‘যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্প কারখানা’

  প্রতিনিধি ১০ আগস্ট ২০২২ , ৩:৫০:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন ফজলে শামীম এহসান। ছবি: সংগৃহীত

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

সাংসারিক খরচ মেটাতে না পেরে অনেক শ্রমিক গ্রামে চলে যাবে। এতে আমাদের শিল্প করখানা বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।

আজ বুধবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কারখানা পরিচালনা করতে মালিকদের এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর শ্রমিকের সংকট দেখা দিলে শিল্পখাতই থমকে যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানে ফজলে শামীম এহসান বলেন, ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিক বিপদে পড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে পোশাকশ্রমিক কাজে মন দিতে পারবে না। দাম বৃদ্ধির কারণে ডিজেল দিয়ে শিল্প চালু রাখা ফিজিবল না। এক্সপোর্ট পজিশন ভালো না। এখন ডলার ক্রাইসিস। আমরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছি। কারণ বায়ারের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিতে পারছি না। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। শ্রমিক গ্রামে চলে যাবে।

তিনি বলেন, ডিজেলের প্রাইস কমানো যেতো কি না বলতে পারবো না। তবে এতে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। তেলের দাম বৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্য কতটুকু বৃদ্ধি পাবে এটা সরকারকে ঠিক করতে হতো। ডিজেলের সুযোগে অনেক কিছুর দাম বাড়ছে। আমাদের পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। ডিজেলের দাম না কমালে শিল্প কারখানা বন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া কোনো পথ নেই।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ত্রুটিপূর্ণ তথ্য-উপাত্তের ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমি বিপিসির পুরাতন হিসাবের খতিয়ান জানতে চাই। গত ৬ বছরে বিপিসি ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। যার মধ্য থেকে সরকার নিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায় ? বলা হয়েছে, ওই টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সেই হিসাব খুঁজে পাই না। কোথায় তারা বিনিয়োগ করে এ অর্থ?

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ফাহমিদা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিপিসি ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও পাকিস্তানের বেশি। এখানে মনে রাখতে হবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে। দাম কাদের চেয়ে বেশি, সিঙ্গাপুর, হংকং ও জার্মানির চেয়ে বেশি আছে। যাদের মাথাপিছু আয় ৫০ হাজার ডলারের কাছাকাছি তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়।যখন তুলনা করব তখন সে দেশের অর্থ সামাজিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা জরুরি।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রথমেই পরিবহন সেক্টরের ভাড়া বৃদ্ধি পায়, ডিজেলে দাম বৃদ্ধিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে, ফলে আমদানি আবার বেড়ে যাবে। শিল্পের উৎপাদনেও খরচ বেড়ে যাবে। তাহলে ব্যবসার লভ্যাংশ কমে যাবে। তারপরও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করবে। যার প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়। এর বড় ধাক্কা আসবে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর। সঞ্চয় ভেঙে খাবে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে সুদের হার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখান থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা বলেন, মূল্য পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আমরা নিম্নমুখী সামঞ্জস্যতার কথা বলছি। এর পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি ও রেশনিং কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষায় খাতে আবার ব্যয় করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে হবে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ দেওয়া হয়েছে, অনেকেই তা নিতে পারেনি। তাদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা যেতে পারে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের বার বার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছোটদের জন্য বাস্তবে কিছু করা হচ্ছে না।

 

অনুষ্ঠানে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by