বাংলাদেশ

রমজানে আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত হয় বান্দা

  প্রতিনিধি ২৭ মার্চ ২০২৪ , ৩:৪৭:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

রমজানে আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত হয় বান্দা

পবিত্র রমজান আসে মুমিনের হৃদয় আন্দোলিত করে। এর সুখ-সুর বাজে প্রতিটা প্রাণের অণুতে অণুতে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে বান্দা কামনা করে তার প্রভুর সান্নিধ্য।

আনুগত্যে আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করে প্রভুর একান্ত কাছের হয়। হৃদয় হয়ে ওঠে আলোকিত। মানুষ হয়ে ওঠে আরও শুদ্ধ আরও পবিত্র। আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত হয় তার বান্দারা। তাই এ মাস অন্য সব মাস থেকে ভিন্নতর। এর ফজিলত বা মর্যাদা গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেক।

এ মাসে আমলের সওয়াব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। একটি ভালো কাজের বিনিময়ে পুণ্য আসে কয়েকটি।

সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে (রমজান) পায় সে যেন রোজা রাখে।’

পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলে কারিম (সা.)-এর অনেক হাদিস রয়েছে। হাদিসের কিতাবগুলো যার বিস্তর সম্ভার। সেখান থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো-

যেমন এক হাদিসে আছে, প্রিয় নবিজি (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলিত। (বুখারি, মুসলিম)।

অপর হাদিসে এসেছে, হজরত সাহাল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ছাড়া আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম)।

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম)।

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) এ মাস তথা রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে যারা রমজান পেল কিন্তু তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না তাদের ধ্বংস হোক।’

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো-রাসুল (সা.) রমজানের গুরুত্ব বোঝাতে কতটা কঠোর হয়েছেন। আর যার গুরুত্ব এত বেশি তার ফজিলত কেমন হবে এটা বুঝবান মাত্রই অনুমেয়।

মাহে রমজানে প্রবৃত্তির অবৈধ চাহিদার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সহজ হয়। প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয় লাভ করে আল্লাহর ভালোবাসা যারা পায় তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন তার কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, আমি অমুক বান্দাকে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস। তখন জিবরাইল (আ.)ও তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর জিবরাইল (আ.) আসমানবাসীদের (সব ফেরেশতা) মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন তোমরাও তাকে ভালোবাস। তখন আসমানবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে থাকে। তারপর পৃথিবীবাসীর অন্তরেও তাকে বরণীয় করে রাখা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৭৪৮৫)।

মাহে রমজান নানাভাবে মুসলমানদের জীবন প্রভাবিত করে। এ মাসে তুলনামূলকভাবে পাপাচার কমে যায়। মানব কুপ্রবৃত্তি সর্বদা মানুষকে আরাম-আয়েশি জীবন এবং বেশি খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ করে; যৌনতা, অশ্লীলতা, ধন-সম্পদের প্রতি অতি লোভ, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, পরচর্চা, অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, মিথ্যা বলা, স্বেচ্ছাচারিতা, আল্লাহর বিধিবিধান সম্পর্কে উদাসীনতা, সালাত থেকে দূরে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। কিন্তু মাহে রমজানে এ চিত্র বদলে যায়।

সর্বত্র ইবাদত ও আমলের পরিবেশ থাকে। মসজিদগুলো মুসল্লি দিয়ে ভরপুর থাকে। পবিত্র রমজানে আল্লাহ শয়তানকে শিকলবন্দি করে দেন, যাতে বান্দারা উপরোক্ত নিন্দনীয় প্রকৃতি ও প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে পরকালমুখী হতে পারে। এজন্য রমজানে আমাদের জীবনকে পাপমুক্ত করতে হবে-যাতে আমরা খোদার রহমতে সিক্ত হতে পারি।

লেখক : নিউইয়র্কের আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারি জেনারেল খতিব ও ইউনাইটেড উলামা কাউন্সিল অব ইউএসএ ইনকের প্রেসিডেন্ট

আরও খবর

Sponsered content

Powered by