বাংলাদেশ

রাজধানীতে আইসিইউ নিয়ে হাহাকার

  প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০২২ , ৫:১৭:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় যাদের একটি বড় অংশের মধ্যে শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার চলছে। কোথাও সিট খালি নেই। একটা আইসিইউ বেড যেন সোনার হরিণ।

আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে রোগীদের আর্তনাদ বাড়ছে। দেশে করোনার সংক্রমণ যখন উদ্বেগজনক ছিল, সেই সময় আইসিইউ শয্যা নিয়ে যেমন হাহাকার ছিল, তেমন চিত্র আবারও ফিরে এসেছে। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র ফাঁকা না পেয়ে রোগী নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে স্বজনদের। আইসিইউ বেডের জন্য রোগীদের নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন স্বজনেরা। সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হন চিকিৎসকেরা। কেবল চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদের। আইসিইউ শয্যা না পেয়ে স্বজনেরা রিস্ক বন্ডে সই করে সাধারণ ওয়ার্ডে সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন গুরুতর মুমূর্ষু রোগীর।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু রোগীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। যথাসময়ে আইসিইউ না পাওয়ায় ডেঙ্গু রোগীদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। যে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, তাকে আইসিইউতেই রাখতে হবে। কিন্তু এখন আইসিইউ বেড খালি নেই। করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতে এই আইসিইউ বেডের ঘাটতির বিষয়টি। কিন্তু তার পরও অনেক জেলা-উপজেলায় এখনো আইসিইউ নেই। এতে গ্রামের মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউর মান ভালো আছে। যদিও অনেক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ নিম্নমানের। আইসিইউর যে ব্যবস্থাপনা সেখানে থাকা দরকার, তা নেই। আইসিইউ বেডের রেটও সেখানে অনেক বেশি।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এ বছর এক দিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর এক দিনে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬১তে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪০ হাজার ৯৮৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৭ হাজার ৬৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৭ জন। এটা সরকারি হিসাব। বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি। ডেঙ্গু বাড়লেও মশা নিধনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনও পৌরসভা আছে, যেখানে জীবনে মশা মারার এক ফোঁটা ওষুধও ছিটানো হয়নি। রাজধানীতে এখন প্রচুর মশা। নিন্দুকেরা বলেন, মশা বাড়লে সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির কর্মকর্তার লাভই হয়। কারণ তারা নানা জিনিসপত্র কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে নিম্নমানের জিনিসপত্র কিনে মোটা অঙ্কের টাকা তারা পকেটে ভরেন।

স্বাস্থ্য প্রশাসন বলছে, দেশের ৫০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেশের সব জেলা-উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী বলেন, গল্প শুনিয়ে লাভ নেই, মশা নিধনে অ্যাকশন চাই। একই সঙ্গে যেসব বাসায় ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা করতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by