বাংলাদেশ

‘রাজপথে আন্দোলন’ গড়তে একমত বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

  প্রতিনিধি ১ জুন ২০২২ , ৭:৫৩:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই, এই বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

সমসাময়িক রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা দূর করত বিএনপি ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে সংলাপ করছে। এরই অংশ হিসেবে আজ বুধবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি, সেখানেই এমন সিদ্ধান্ত হয়।

সংলাপের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের আন্দোলনের বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এখন আমরা যারা একমত হচ্ছি তারা যৌথভাবেই আন্দোলন শুরু করব এবং নিজের নিজের জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু করব। আন্দোলন যুগপৎ হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ধারা নির্ধারিত হবে যে শেষ পর্যন্ত সেটা কীভাবে রূপ নিচ্ছে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা রাজনৈতিকদলগুলো এক জোট হয়ে কাজ করলে অবশ্যই এই দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হব। মানুষ দেখতে চায় যে, আজকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আছে। এই দুঃশাসন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিরোধী দলগুলোকে জনগণের পক্ষে একটা কার্যকর-সমন্বিতভাবে যুগপৎ ধারায় মাঠের একটা কার্যকর ঐক্য দেখতে চায়। আজকে আলোচনায় বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটাকে আমরা আরও জোরদার করব এবং আন্দোলনের কাজটাকে আমরা আরও সমন্বিত করব।’

সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে উল্লেখ করে বাম ঘরানার এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণ-আন্দোলন ও গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না যায় মানুষের ভোটের অধিকার বলি, গণতান্ত্রিক অধিকার বলি, অথবা একটা তদারকির সরকার, অবাধ গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অথবা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ কোনোটাই বাংলাদেশে নিশ্চিত করা যাবে না। সেই কারণের জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করে আন্দোলনে ঐকমত্য হয়েছি। দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, আজকে বিরোধী দলগুলো যে উদ্যোগ নিয়েছে মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াবেন এবং তারা আন্দোলনের সাথী হবেন।’

বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবে না, তবে একই লক্ষ্য অর্জনে দুই দলের কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে বলে জানান দুই দলের নেতারা।

সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতামত তুলে ধরে সাইফুল হক বলেন, ‘শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তনের জন্য আমাদের এই আন্দোলন নয়। পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, পরিবর্তন, একই সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কারসহ এখানে রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক যে সংস্কার এবং আমাদের এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকদের ওপরে একটা সহিংস ভূমিকায় আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে যেভাবে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়-এই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন।’

সাইফুল হক বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে নির্বাহী বিভাগ এখন যেভাবে বিচার বিভাগ বা আইন প্রণয়ন বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপরে যেভাবে তারা (সরকার) কর্তৃত্ব করে এটা আধুনিক রাষ্ট্রের সাধারণ যে ভারসাম্য তার পরিপন্থী। এই সমস্ত বিষয়ে আমরা গুণগত পরিবর্তন, সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। আমরা পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন। আমরা আজকের আলোচনায় সংকট উত্তরণে আমাদের দলের ৩১ দফা বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে পেশ করেছি।’

এসব বিষয়ে একমত পোষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন,‘যেসব সংস্কারের কথাগুলো সাইফুল হক সাহেব বলেছেন, আমরাও যে সমস্ত কথা বলছি এই সব সংস্কার নিয়ে আমরা আরও বিশদ আলোচনা করব এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারেও আমাদের যৌথ বক্তব্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হব।’

সংলাপে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছান আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, মাহমুদ হোসেন ও এ্যাপেলো জামালী।

গত ২৪ মে বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের ঐক্য গড়ে এই সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন তারা নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে এবং ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। গতকাল গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করে তারা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by