চট্টগ্রাম

রাবেয়া সুলতানা: আদর্শ শিক্ষক ও উদ্যোক্তা

  প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর ২০২২ , ৮:০৮:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

হাবীব মিয়াজী, ফেনী প্রতিনিধি:

কথায় বলে যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। এটি একজন আদর্শ রমণীর ক্ষেত্রে বলতে প্রায়ই শোনা যায়। কন্যা, জায়া, জননী তিন রূপে নারীকে স্থানে-কালে দেখা যায়। এর বাইরেও নারীর রয়েছে বহুমুখি রূপ ও প্রতিভা। বর্তমান সময়ে নারীরা জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে সমানভাবে বিচরণ করছেন। একজন কুল বধু হতে নারীরা আজ কারখানার শ্রমিক, হাসপাতালের সেবিকা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বিসিএস ক্যাডার, আর্মি, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, শিক্ষকতা, ফ্যাশন জগত, অভিনয় শিল্পী, কন্ঠ শিল্পী ও শিল্প উদ্যোক্তা। আরো রয়েছে হাজারো পেশা, যা নারীরা জয় করে বর্তমান বিশ্বে পুরুষের সাথে সমানতালে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। কবির এই অপ্তবাক্যের সুনিপুণ বাস্তবতা আজ নারীদের কাজে-কর্মে আমরা দেখতে পাই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীদের একটি বৃহৎ অংশ এখনো পর্যন্ত পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও ধর্মীয় গোঁড়ামীর যাঁতাকলে পিছিয়ে আছে। যেসব নারী সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ করে সাহস নিয়ে বৃত্তাবদ্ধ আবদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তারা সফল হয়েছেন।
আজ তেমনি একজন মমতাময়ী শিক্ষক ও নারী উদ্যোক্তার উপ্যাখান তুলে ধরা হলো।
রাবেয়া সুলতানা। ফেনী ন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক। শোনেন বেশী, বলেন কম। ভালটা গ্রহন করেন আর খারাপটা বর্জন করেন। তার সময়টা নিয়মানুবর্তিতার আবদ্ধে ঘেরা। একজন সু- গৃহিনী, মমতাময়ী মা, প্রিয়তমা স্ত্রী, আদর্শ শিক্ষক এসবের গন্ডি ছাপিয়ে তিনি একজন উদ্যোক্তা!
অনেক গুণে গুণান্বিতা রাবেয়া সুলতানা সময়ের সঠিক মূল্য দিতে জানেন। সময় জ্ঞান ও সময়ের ব্যবহার কাজে লাগাতে রাবেয়া সুলতানা অবসরে আরো কিছু করার স্বপ্ন বুনেন। অসীম সাহস আর দৃঢ় মনোবলকে সারথী করে স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্বপ্ন দেখান তিনি। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের উচ্চতম শিখরে আরোণের স্বপ্নে বিভোর রাবেয়া সুলতানা গড়ে তোলেন গ্রীণ ক্রাফট নামক একটি ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্ম সংস্থান হয়েছে ১৫ জন শ্রমজীবি মানুষের। এর সাথে যুক্ত রয়েছেন আরও ৫০ জন নর-নারী। রাবেয়া সুলতানার গ্রীণ ক্রাফট প্রতিষ্ঠানে তৈরী হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব পণ্য। তিনি কাজ করছেন সুপারি পাতার খোলের তৈরি প্লেট- বাটি, জুট প্রোডাক্ট, হাতের কাজের পণ্য, উন্নত মানের ট্রাভেল ব্যাগ ও বিভিন্ন ধরনের হোম ডেকোরেশনের এর পণ্য নিয়ে। সুপারি পাতার খোলের তৈরি প্লেট ইতিমধ্যেই রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ও সরবরাহ করছেন বিভিন্ন প্রোগ্রামে, বিভিন্ন চেইনশপে। সুপারী পাতার প্লেটে রং তুলির আলপনা দৃষ্টি কাটে সকলের খুব সহজে। সুপারি পাতার খোলের প্লেট ও অন্যান্য পণ্য নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা নিজেরাও বিজনেস পরিচালনা করে স্ববলম্বী হচ্ছেন। গ্রীণ ক্রাফটের তৈরী পণ্য গুলোর বাজার রয়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানীতে। তৈরীকৃত নজরকাড়া হোম ডেকোরেশন সামগ্রী দেশে এবং দেশের বাইরে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বৃহৎ পরিসরে সম্ভাবনাময় এই ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারলে বহিবির্শ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতিতে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। গ্রীণ ক্রাফটের প্রতিটি হোম ডেকোরেশন সামগ্রী দৃষ্টিনন্দন। সহজেই রুচিশীল মানুষকে আকৃষ্ট করে।
দু’ সন্তানের জননী রাবেয়া সুলতানার এইসব নান্দনিক কাজে অনুপ্রেরণা জোগান স্বামী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। ঢাকার মিডফোর্ডের পাইকারী সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন, তার স্ত্রী রাবেয়া সুলতানার শৈল্পিক কাজে দারুণ খুশি।
লক্ষীপুর জেলার মেয়ে রাবেয়া সুলতানা সময়ের সাথে আগামীর পথে এগিয়ে যেতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by