দেশজুড়ে

লক্ষ্মীপুরে স্কুলে ভর্তি করাতে না পেরে অভিভাবকদের ক্ষোভ, মানববন্ধনের হুশিয়ারি!

  প্রতিনিধি ৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ৬:৪০:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুরে স্কুলে ভর্তি করাতে না পেরে অভিভাবকদের ক্ষোভ, মানববন্ধনের হুশিয়ারি!

লক্ষ্মীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানদের ভর্তি করাতে না পারায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন ঐতিহ্যবাহী এবং কুমিল্লা বোর্ডে বার বার সাফল্যের উচ্চ শিখরের প্রতিষ্ঠান প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। আধুনিক মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর তদারকি, উচ্চ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্যানেল, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক এবং শতভাগ পাশের হারের কারনে স্থানীয় ও দূরের অনেকেরই আশা তার সন্তান প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে।

চন্দ্রগঞ্জ বাজারের উন্নয়ন এবং বর্তমান বৃহত্তর নোয়াখালীর অন্যতম বানিজ্য কেন্দ্র হওয়ার অন্যতম কারন হলো প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। নিজের সন্তানকে এই স্কুলে পড়ানোর জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেক প্রবাসীর পরিবারসহ অনেকেই চন্দ্রগঞ্জ বাজার ও আশেপাশে বাসবাড়ি করছে অথবা ভাড়া নিয়ে থাকছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হয় চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের। যার কারনে দিন দিন চন্দ্রগঞ্জ বাজারের পরিধি ও উন্নতি গতিমান হচ্ছে। যেহেতু এখনো চন্দ্রগঞ্জে তেমন কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান নাই, তাই শুধু এই স্কুলকে কেন্দ্র করে অনেকেই বাজারের আশেপাশে নিজের আবাসস্থল করে নিচ্ছে এবং এই এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে।

কিন্তু হতাশার বিষয় হলো ২০২৪ শিক্ষবর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে ভর্তি নীতিমালা জারি করা হয়েছে তাতে অনেক অভিভাবকেরই মাথায় হাত। যেখানে প্রতাপগঞ্জ স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতো ৩০০-৩৫০ বেশি ছাত্র/ছাত্রী। সেখানে অনলাইনে আবেদনের পর বোর্ড থেকে প্রতাপগঞ্জ স্কুলে ভর্তির জন্য মাত্র ২১৪জন সুপারিশ পায় আর ৬জন বিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা থাকে, মোট ২২০জন। প্রতি শাখায় নীতিমালা অনুযায়ী ৫৫জন (মোট শাখা-৪টি)। এই স্বল্প সংখ্যক ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির কারনে অভিভাবকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের দেখা দিয়েছে। অনেক অভিভাবক মানববন্ধনের হুশিয়ারি দিয়েছে।

সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যায়, এখনো ১০০ বেশি ছাত্র/ছাত্রী কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নি। তারা আশায় আছে কোন না কোন ভাবে তাদের কাঙ্খিত প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যলয়ে তাদের সন্তান ভর্তি করাবে।

লতিফপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহম্মদের ছেলে মো. হারুনুর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার বাবা একজন বীরমুক্তিযোদ্ধ। আমার বাবা প্রতাপগঞ্জ স্কুলের ছাত্র, আমি প্রতাপগঞ্জ স্কুলের ছাত্র, আমার বড় ছেলেও ঐ স্কুলের ছাত্র। বর্তমানে আমার মেঝো ছেলেকে নিয়ে ভর্তির জন্য বিপাকে পড়ছি। আমার বাড়ি স্কুলে পাশে এখন আমি আমার ছেলেকে কোথায় ভর্তি করাবো?”

প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধিগণ জানান, “এই ঐতিহ্যবাহী স্কুলে যদি নিজ এলাকার ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হতে না পারে তাহলে এই এলাকার মানোন্নয়নে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এটি বড় বাধা হয়ে কাজ করবে।“ এছাড়াও তারা স্থানীয় অভিভাবকদের সাথে একমত পোষণ করেন।

প্রতাপগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ মোস্তাফা কাজল জানান, “আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সব ছাত্র/ছাত্রী বিদ্যালয়ের আশে পাশের বাড়ির। এছাড়াও বিদ্যালয়টি একই বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত। এখন বর্তমান ভর্তি নীতিমালার কারনে অনেক কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রী এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে তাদের অতি কাঙ্খিত প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে। প্রতিদিনই অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে আসে তাদের সন্তানদের এখনো কোথাও ভর্তি করায় নি। এ বিষয়ে আমাদের একটাই উত্তর সরকারি নীতিমালার বাহিরে আমাদের করনীয় কিছু নেই। এই বেষ্টনীর মধ্যে থেকে চেনা জানা পরিবেশ থেকে তারা উক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে নিজেদেরকে খুব অসহায় ভাবে এবং অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম মুক্তিকন্ঠকে বলেন, “সরকারী নীতিমালার বাহিরে আমাদের কিছু করনীয় নেই।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবু তালেব মুক্তিকন্ঠকে জানান, এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আমি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলব, যেন দ্রুত সময়ে বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে আরো ১/২ শাখা বৃদ্ধি করে। তাহলে স্থানীয় ছাত্র/ছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by