দেশজুড়ে

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ

  প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪:৩০:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ

লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি রায়পুর উপজেলার ১০টি ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে উপ-নির্বাচন ছাড়া কখনোই জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। এ কারণে এ আসনটি আগে থেকেই বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তবে বিএনপির দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে তাদের ঘরে দখল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সোচ্চার হয়েছে আওয়ামী লীগ।

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের দাপুটে রাজনীতি, ব্যাপক উন্নয়ন, সাংগঠনিক দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি এবং তরুণ ভোটারদের আগ্রহে বিএনপির সেই ভোট ব্যাংকে এখন ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে। বিএনপির নারী ভোটারদের বিশাল একটি অংশে জামায়াতে ইসলামী হানা দেওয়ায় এবং বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতায় দলটি এখানে এখন আর আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসনের নারী ভোটারদের প্রতি বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকলেও জামায়াতের কারণে এখন তা নড়বড়ে অবস্থায় এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকলে আন্ডারগ্রাউন্ডে তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমে তারা যতটা না প্রকাশ্যে আছে, তার চাইতে বেশি ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহারে সংগঠন চালাচ্ছে।

গত কয়েকদিন নির্বাচনী এলাকার ভোটার, সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতার সময়ে একবার বিপুল ভোটে জিতেছেন বিএনপির প্রার্থী আবুল খায়ের ভূঁইয়া। দুবার আওয়ামী লীগ জোটগত কারণে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আসনটি। এরমধ্যে একবার বিনাভোটে (বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায়) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান। দ্বিতীয়বার তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বৈরি পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে তিনি ভোটগ্রহণের একসপ্তাহ আগে প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী বহুল আলোচিত ও কুয়েতে দণ্ডিত কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। তিনি দণ্ডিত হওয়ার পর আসনটি শূণ্য হলে ২০২১ সালের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আলোচনায় রয়েছেন নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, এসেনসিয়াল ড্রাগ্স’র এমডি ডা. এহসানুল কবির জগলুল, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ ও আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী প্রমুখ।

বিএনপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু। তবে খায়ের ভূঁইয়া নিয়মিত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে মাঠে তৎপরতা চালালেও রায়পুরে সাহাব উদ্দিনের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নেই বললেই চলে। এখানে তাঁর বলয়ে থাকা নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন থেকেই রয়েছেন মূল দলের বাহিরে।

জোটগতভাবে ১৪দলীয় জোট নির্বাচন করলে আবারো আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জোটগতভাবেও জাতীয় পার্টি এ আসনটি চাচ্ছেন। রওশন এরশাদ এ আসনে যে তালিকা দিয়েছেন সেখানে মোহাম্মদ নোমানের নাম রয়েছে। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে আলোচনায় রয়েছেন মোহাম্মদ নোমান, নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু, শেখ ফায়্যিজ উল্লাহ শিপন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে এককপ্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলটির জেলা আমীর এস.ইউ.এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ না হলেও ঘরোয়া রাজনীতিতে তিনি সরব রয়েছেন। তাঁর পক্ষে মাঠে গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্মীপুর জেলা আমীর এস.ইউ.এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। এরপরও খালি মাঠে কাউকে এককভাবে গোল দিতেও দেওয়া হবে না। এজন্য আমরা সবরকমের প্রস্তুতিই নিচ্ছি। আমাদের দলও এখন আগের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত।’

সাবেক সংস সদস্য ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনার অধিনে কোনো পাঁতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। তিনি যেদিন বিদায় নেবেন, সেদিন নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলবো। এ কারণে আমরা এই মুহুর্তে আগামী নির্বাচনের কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা বা মন্তব্য করতে চাই না। এখন একটাই কাজ- হাসিনা সরকারের বিদায়।’

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘শুধু লক্ষ্মীপুর-২ আসন নয়, পুরো জেলাতেই আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। জেলার চারটি পৌরসভা, ৫৮টি ইউনিয়ন ও তিনটি সংসদীয় আসন এখন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা চালাচ্ছেন। লক্ষ্মীপুর-৪ আসন ছেড়ে দেয়ায় সে আসনটি বিকল্প ধারার রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। লক্ষ্মীপুর-২ আসনেও আগামীতে আমি প্রার্থী। ব্যাপক উন্নয়ন ও ভোট বাড়ায় এ আসনসহ চারটি আসনেই আগামীতে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করবে।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by