বাংলাদেশ

সাতকানিয়ায় নির্বাচনে সহিংসতা : সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব দেওয়া কায়েস-নাসিরসহ গ্রেপ্তার ৮

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৪:৩৩:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীদের মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন সহিংসতার ঘটনায় আট সন্ত্রাসীকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল সোমবার রাতে র‌্যাব সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

অভিযানকালে সহিংসতায় ব্যবহৃত তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র এবং ৪২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- নাসির উদ্দিন, মো. মোরশেদ, কোরবান আলী, মো. ইসমাঈল, মো. জসিম, মো. মিন্টু, মো. কায়েস ও মো. নুরুল আবছার।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে কতিপয় অস্ত্রধারী দুষ্কৃতিকারী ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালায়। এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে র‌্যাব-২, ৭ ও ১৫-এর সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন।

খন্দকার আল মঈন জানান, গতকাল সোমবার রাতে র‌্যাব-১৫’র অভিযানে বান্দরবান সদর থেকে সহিংসতায় অংশ নেওয়া নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়; পরে তার দেওয়া তথ্যে, সাতকানিয়া থেকে মোরশেদ, কোরবান আলী ও ইসমাঈলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই র‌্যাব-৭ এর অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে সহিংসতায় জড়িত জসিমকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যে চন্দনাইশ থেকে মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে আজ মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মহানগরীর তেজকুনীপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সহিংসতার নেতৃত্ব দেওয়া কায়েস এবং তার সহযোগী নুরুল আবছারকে।

সহিংসতার ওই ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় খাগরিয়া ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, কায়েস গত দুই বছর যাবত চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। সাতকানিয়া আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন কায়েস। ৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকে ঢাকায় আত্মগোপন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় আগেও মামলা হয়েছে।

নাসিরও একটি কোম্পানির চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছিলেন। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহবাগে ফুল বিক্রি করতেন। সহিংসতায় সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব ছিলেন তিনিও। সহিংসতার সময় নাসিরকে মেরুন রঙের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙের মাস্ক পরা অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে তিনি বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিলেন।

আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ডভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাতকানিয়ায় কোনো সহিংসতার আভাস পেলেই সেখানে চলে যেতেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ওইদিন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেন তিনি। পরে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি কায়েসকেও আত্মগোপনে থাকতে সহায়তা করে। মোরশেদ কায়েসের গ্রপের একজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য। পেশায় সিএনজিচালক মোরশেদকে ঘটনার দিন একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা গেছে। জসিম খাগরিয়ার বাসিন্দা। পেশায় রাজমিস্ত্রী হলেও চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে অংশ নেন। সহিংসতাকালীন একটি ছবিতে লাল জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তাকে কার্তুজ বা অ্যামোনিশনের একটি বস্তাসহ মোরশেদের পাশে দেখা যায়। পেশায় গাড়িচালক মিন্টু কায়েসের নির্দেশে সহিংসতার উদ্দেশ্যে বাইরে থেকে অস্ত্র পরিবহন করেন। তার তত্ত্বাবধানে ওইদিন ৩০-৩৫ জন বহিরাগতকে সাতকানিয়ায় নিয়ে আসা হয়। তিনি নিজেও অস্ত্র হাতে সহিংসতায় অংশ নিয়েছিলেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by