আইন-আদালত

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত

  প্রতিনিধি ২৬ জুলাই ২০২১ , ৪:১৮:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন আইনজীবী ও সিলেটের স্থানীয় ভোটারদের একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। রিট আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত আদেশ দিয়েছেন আদালত। পরবর্তী সময়ে আবার শুনানি হবে বিষয়টির ওপর।’

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত চেয়ে সকালে রিট আবেদনটি করা হয়। রিট আবেদনের ওপর সোনালি সময় অ্যাডভোকেট শিশির মনির আদালতকে বলেন, ‘সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এই অবস্থায় নির্বাচন হলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

এ সময় সরকারপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার আদালতকে বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। ওই স্বাধীন সংস্থার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না। তা ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’ জবাবে অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘আমরাও স্বাধীন। বিচার বিভাগ স্বাধীন। সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে, আমরা তার পক্ষে আছি। চলমান পরিস্থিতিতে মহামারি রোধ করার জন্য এই নির্বাচন স্থগিত হওয়া প্রয়োজন।’

পরে আদালত বলেন, ‘নির্বাচন যেহেতু অতি নিকটে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তাই আপাতত ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করা হলো। পরবর্তী পরিস্থিতি অনুযায়ী আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

এর আগে গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি রিট আবেদনকারীদের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় । কিন্তু নির্বাচন কমিশন ওই লিগ্যাল নোটিশ অনুযায়ী সাড়া না দেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়।

যে পাঁচ আইনজীবীর পক্ষ থেকে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে তারা হলেন অ্যাডভোকেট মো. মুজাহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আল-রেজা মো. আমির, অ্যাডভোকেট মো. জোবায়দুর রহমান, অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনের ভোটার সালেহ আহমেদসহ আরও সাতজন রিট আবেদন করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, ‘২০২১ সালের ১১ মার্চ সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট-৩ আসনটি শূন্য হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৫ মার্চ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১১ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ২৯ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ১২৩-এর দফা ৪ অনুযায়ী উক্ত শূন্য পদ পূরণে ৮ জুন ২০২১ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রহিয়াছে।’

‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ১২৩-এর দফা ৪-এর শর্তানুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত দৈবদুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত মেয়াদ, অর্থাৎ শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উল্লিখিত শূন্য আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না। এমতাবস্থায় সিলেট-৩ শূন্য আসনের নির্বাচন নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে অনুষ্ঠান সম্ভব না হওয়ায় পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইবে। তাই গত ২ জুন নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ১৪ জুলাই ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করে। তবে গত ১৫ জুন নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন করে ২৮ জুলাই নির্ধারণ করে।’

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, সংবিধানের ১২৩-এর দফা ৪-এর শর্তানুসারে সিলেট উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত। তাই ২৮ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচন স্থগিত করা যাবে না—এমন বক্তব্য আইনের সঠিক ব্যাখ্যা নয়। এ ক্ষেত্রে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই।

‘তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত, চলমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি বিবেচনায় এবং লকডাউনের সময়ে নির্বাচন আয়োজন না করে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্য যেকোনো সময় ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা। কারণ, এই সময়ে ৩ লাখ ৫২ হাজার ভোটারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারের বর্তমান লকডাউন নীতির বিরোধী। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিবেচনায় ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট-৩ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশ প্রয়োজন।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by