বাংলাদেশ

৩৩৩-তে খাবার চেয়ে ফোন আসে দিনে ৪৩ হাজার

  প্রতিনিধি ২৯ জুলাই ২০২১ , ১:২৪:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা মহামারির মধ্যে সরকারঘোষিত ৩৩৩ হটলাইন নম্বরে প্রতিদিন খাবারের জন্য ফোন করছেন ৪৩ হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে দিনে গড়ে খাবার পেয়েছেন ১ হাজার ৭১২ জন। সরকারের হটলাইন নম্বরে ফোন এলেও বিভিন্ন কারণে দিনে ৪১ হাজার ৬২৯ জনকে খাবার দেওয়া সম্ভব হয়নি।

করোনা নিয়ন্ত্রণে গত এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ শুরুর পর এখন দিনে ২ হাজার ২৭৪ জন মানুষ ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাবার চেয়ে কথা বলতে পেরেছেন। আর ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন ৩৩৩ নম্বরে খাবারের জন্য ফোন করলেও কথা বলতে পারেননি। জনবলসংকটের কারণে ৩৩৩-এর খাবার সহায়তার ইউনিট থেকে এদের ফোনে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মেনে নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘৩৩৩-তে ফোন করে সহজেই যাতে মানুষ কথা বলতে পারেন, আইসিটি বিভাগ তা নিয়ে কাজ করছে। অপারেটরের সঙ্গে কথা বলতে দীর্ঘ সময় যাতে অপেক্ষায় থাকতে না হয়, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। আশা কয়েক দিনের মধ্যেই এর সমাধান হবে।’

করোনা মহামারির মধ্যে ৩৩৩ নিয়ন্ত্রণকারী এটুআই এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭২ জন মানুষ ৩৩৩-তে ফোন করে কথা বলেছেন। তাঁদের মধ্যে খাবার নিয়ে কথা বলেছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৯ জন। খাবার চেয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন। আর খাবার সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে তথ্য জেনেছেন ৫৩ হাজার ১৮১ জন মানুষ।

হটলাইনে ফোন করে যাঁরা খাবার চেয়েছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ইউএনওদের পাঠানো হয়। ইউএনওরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে তা যাচাই করে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছেন। এতে আছে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি ইত্যাদি। আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও যাঁরা ৩৩৩-তে ফোন করে খাবার চেয়েছেন, তাঁদের খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ৩৩৩-তে ফোন করে যাঁরা খাবার চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, ‘অভাবী সবাইকেই খাবার দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় জমিজমা আছে কিন্তু ধানের ফলন ভালো না হওয়ায় বা ব্যবসা মন্দা থাকায় ফোন করে খাবার চেয়েছেন। আমরা তাঁদের খাবার দিচ্ছি না।’ লালমনিরহাটের আদিতমারীর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন এবং খুলনার ডুমুরিয়ার ইউএনও মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, খাবারের জন্য যাঁরা ফোন করেছেন, যাঁচাই করে তাঁদের খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকেই খাবার পাচ্ছেন না।

জটিলতা কোথায়?
৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি সেবার তথ্য, স্বাস্থ্যসেবা, ভূমিসেবা, জরুরি খাদ্যসহায়তা, নিত্যপণ্য ও ওষুধ কেনা এবং সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহায়তা পাওয়া যায়। এই হটলাইনে ফোন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইভিআর সিস্টেমে তা রিসিভ হয়। এরপর যে যে বিষয়ে সেবা পেতে চান সেই শর্টকোড নম্বর চাপতে হয়। এটুআইর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ৩৩৩ হটলাইনে অনেক হিট হওয়ায় তাঁরা সবার ফোনে সাড়া দিতে পারছেন না। বিষয়টি সমাধানে তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন।

আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৩৩৩ নম্বরে এখন দিনে ১ লাখ ফোন আসছে। এর মধ্যে ৪১ শতাংশ মানুষ খাবার চেয়ে ফোন দিচ্ছেন। সবার ফোন যাতে রিসিভ করা যায় সে জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি। বাংলাদেশে যত উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে বাছাই করেছি। তাঁদের মধ্য থেকে ৫০ জনকে নেওয়া হবে। এখন ৪০ জন ৩৩৩-এর খাদ্যসহায়তা ইউনিটে কাজ করছেন, এদের সঙ্গে ৫০ জন যুক্ত হলে দিনে ২৫ হাজার জনের সঙ্গে কথা বলা যাবে। আগামী ১ আগস্ট থেকেই আমরা দিনে ২৫ হাজার ফোন নিতে পারব।’

একজন কর্মকর্তা জানান, ইউএনওরা যাতে ৩৩৩-এর কন্ট্রোল প্যানেলে ঢুকে সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্যগুলো দেখতে পারেন সে জন্য তাঁদের আইডি-পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। নিজ নিজ এলাকার কত মানুষ খাবার চেয়ে ফোন করেছেন, তাঁরা এখন নিজেরাই সেই তথ্য দেখে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by