প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৪ , ৮:২৬:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ
রূপগঞ্জের গাজী টায়ারে আগুনের ঘটনায় দুর্ঘটনা কবলিত ভবন ধ্বসের আশঙ্কায় অভিযান নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ভবনের ভিতরে অধিক তপ্ত ও ধ্বসে পড়ার আশঙ্কাসহ নানা প্রতিক‚লতায় উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ২৮আগষ্ট বুধবার বিকেল ৩টায় পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে।
গাজী টায়ার কারখানা ভবনের আগুন নিভে গেলেও ভিতরে উত্তাপ রয়েছে। তবে ভবনের স্থানে স্থানে দেয়াল ধসে পড়ছে। চতুর্থ ফ্লোর ঝুলে গেছে। সেকারনে ভিতরে প্রবেশ করতে পারছেনা ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ভবনের প্রবেশধারে বেরিকেড দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, শিল্প পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে তারা সিঁড়ি দিয়ে ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে নিখোঁজদের তল্লাশীর চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল মান্নান।
এদিকে সকাল থেকে কারখানার প্রবেশদ্বারে নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনরা ভিড় জমিয়েছেন। নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তারা। তবে কখন ভবনে পুরোদমে অভিযান শুরু হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেনা। এদিকে ঘটনার আলামত, সাক্ষ্য প্রমাণাদি প্রাপ্তি সংস্থা ক্রাইমসিন ইউনিটের প্রতিনিধি দলের প্রধান পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন করেছেন ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ।
তদন্ত কমিটির প্রধান নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, আগুনে ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটির যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। তদন্ত কাজ চলছে। আগামী দশ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে জাতীয়ভাবে বিষয়টি দেখার জন্য উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। স্থানীয়ভাবে,ছাত্র সহ একাধিক তালিকা হচ্ছে । পরবর্তীতে আমরা অবশ্যই নিখোঁজের সঠিক তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রাজধানীর ডেমরা কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা লিটন মিয়ার ছেলে হযরত মিয়া তিন মাস আগে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন ফারজানা আক্তারকে। হাতের মেহেদীর রং এখনো শুকায়নি। গত রবিবার অন্যদের মতো মালামাল সংগ্রহ করতে গাজী টায়ার কারখানায় গিয়েছিলেন হযরত মিয়া। রাতে কারখানার আগুন লাগা ভবনের ছয়তলায় আটকা পড়েন তিনি। এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন হযরত মিয়া। তার পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম।
রুপসী কলাবাগান এলাকার জোসনা বেগম জানান, তার স্বামী শেখ ফরিদ গত ৫আগস্ট তার বন্ধুদের সাথে এই কারখানা থেকে কিছু টায়ার এনে বিক্রি করছিলো। গত ২৫ তারিখেও বন্ধুদের সাথে গাজীর কারখানা থেকে টায়ার আনতে যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলছিলো ৬ তলা ভবনের ছাদে আগুনে আমি আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচাও। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না । আমাকে মাফ করে দিও।
নিখোঁজ মিল্লাতের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার জানান, তার স্বামী গত রবিবার গাজী টায়ার কারখানায় গিয়েছিলো মালামাল নিতে। আমি নিষেধ করছিলাম। কিন্তু সে আমার কথা রাখেনি। আজকে তিনদিন হয়ে গেলো আমার স্বামীর কোন খোঁজ-খবর পাইতেছিনা। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কি করমু। বিলাপ করে কাঁদছেন আর স্বামীর জন্য আহাজারি করছেন এই গৃহবধূ।
এ ঘটনায় গত রবিবার ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ১৭৬ জনের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের বেশির ভাগ মানুষের বাড়ি উপজেলার মৈকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাবো, বরাবো, চনপাড়া, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের গ্রামে। নিখোঁজদের প্রায় সকলের বহিরাগত ।
গাজী টায়ার কারখানার নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, কারখানাটি একেবারেই শেষ হয়ে গেছে । তাতে ১০/১২ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে । আগুনে কারখানায় ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরুপণ করা যায়নি।
উল্লেখ্য গত ২৫আগস্ট দুর্বৃত্তরা রূপসী গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। লুটপাট করতে গিয়ে ভবনের ভেতরেই অনেক মানুষ আটকে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ১৭৬জন নিখোঁজ থাকলেও বাস্তবে এর সংখ্যা আরো বেশি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।