প্রতিনিধি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:৫০:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
রাঙ্গামাটির প্রত্যান্ত এলাকার অসহায়, দারিদ্র ও দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসার স্থল লংগদু সরকারি হাসপাতাল। প্রতিনিয়ত এসব সাধারণ মানুষ গুলো ভীড় জমায় লংগদু উপজেলা সদর হাসপাতালে। কিন্তু হাজারো আশা এবং জীবন বাঁচানোর স্বপ্ন নিয়ে যখন হাসপাতাল আসেন তখনি চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, সকাল দশটায় হাসপাতালে রোগীর প্রচন্ড ভীড় এবং একজন চিকিৎসক দিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে বাকি চিকিৎসক কোথায় জানতে চাইলে, হাসপাতালের টি এইচ ও ডাক্তার শাহিন বলেন, ডাক্তাররা লংগদুরের মত জায়গায় এসে কি বসে থাকবে? তাদের এখানে কি ফেসিলিটি আছে? অ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার প্রায়ই নেশা করে বা বিভিন্ন অন্যায় করে এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন, নেশা করা এটাতো পাহাড়ীদের অভ্যাস। এটা আসলে বলার কিছু নাই। তাহলে কি তিনি পাহাড়ীদের ছোট করেছেন? নাকি ড্রাইভারকে নেশা করে গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করছেন এসব বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে কর্মরত জাহাঙ্গীর নামের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী তিন মাসের একটি ছোট শিশুকে ইনজেকশন দিচ্ছে। এমন কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলে। এব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের টি এইচ ও ডাক্তার শাহিন বলেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই কাজের সাথে জড়িত তাই এসব কাজে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে অফিসিয়াল ভাবে এধরণের নিয়ম নাই।
গত রবিবার সকালে লংগদু হাসপাতালের টি এইচ ও ডাক্তার শাহিন কে গর্ভবতী বোনের জন্য জরুরি ভাবে অ্যাম্বুলেন্স এর জন্য মোবাইল কয়েকবার কল দেওয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভি করেনি। একই সময় হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার মামুন কে ফোন করলে তিনি ও কল ধরেনি। পরবর্তীতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ডাক্তার বিধান কে ফোন করলে তিনি জরুরি বিভাগে এসে যোগাযোগ করতে বলে, কিন্তু জরুরি বিভাগে এসে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত স্পিড বোটে করে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এসব বিষয়ে ডাক্তার শাহিনকে অফিসে না পাওয়ায মোবাইল ফোনে আবারো সকাল দশটার দিকে ফোন জানালে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন কাহিনী না করে মেটার বিষয় বলেন। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স এর বিষয় বিস্তারিত বলার পর তিনি বলেন, আপনাকে যখন জরুরি বিভাগে আসতে বলছে, আপনি এসে অপেক্ষা করতেন। তিনি আরো বলেন, জরুরি বিভাগে ডাক্তার সারাক্ষণ বসে থাকবেনা সে বাহিরে বা বাড়িতেও থাকতে পারে।
এছাড়াও, উপজেলার গাঁথাছড়া গ্রামের নুর শাহিদ ও নুর কবির অভিযোগ করে বলেন, গত সপ্তাহে আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ইবনে সিনা (রাবেতা) হাসপাতালে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে লংগদু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে কল দিলে তিনি বলেন গাড়িতে তেল নাই। কিন্তু মাকে বাঁচাতে আমরা তেল দিবো বল্লেও সে আসবে আসতেছে বলে কালক্ষেপন করে আমাদের সময় নষ্ট করেছে। পরবর্তীতে আমার মা এখানেই মারা যায়। আমরা যথাযথ বিচার চাই ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে ডাক্তার শাহিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তেমন কোন পাত্তা দেয়নি। এর আগেও হাসপাতালের একজন স্টাফ এর বিরুদ্ধে দরজা জানালার বিক্রি অভিযোগ উঠলে তিনি নয়ছয় দিয়ে সমাধান করেন। সব শেষে যখন প্রতিনিধি তাকে বলেন, আপনার বলা কথা গুলো রেকর্ড করা হয়েছে নিউজে এভাবেই তুলে ধরবো, আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। তখন তিনি বলেন এর আগেও আপনারা নিউজ করেছেন, নিউজ করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালে গেলে কোন রকম সহযোগিতা পায়না ভুক্তভোগীরা। ডাক্তার কোনরকম দেখে বাহির থেকে ওষুধ কিনে নিতে বলেন। কোন রকম ভালো পরীক্ষা তারা করেনা। তারা বলছেন প্রায় ২৮/২৯ বছর যাবত এ-ক্সে ম্যান রয়েছে, মেশিনও আছে দুটির কোনটির কোন কাজ হাসপাতালে নাই। কিন্তু এ-ক্সেরে ম্যান ঠিকই সরকারি বেতন ভাতা খেয়ে যাচ্ছেন। লংগদু উপজেলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রভাবশালী ও দায়িত্বহীন কর্তৃপক্ষের অপসারণ চায় সাধারণ ভুক্তভোগীরা।
এবিষয়ে রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন নুয়েন খীসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি আপনি আমাকে অবগত করেছেন খোঁজখবর নিয়ে ব্যাবস্থা নিচ্ছি।