রংপুর

উলিপুরে শীত ও কুয়াশা অপেক্ষা করে বোরো চাষের উৎসব 

  প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫:১৬:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে শীত ও কুয়াশা অপেক্ষা করে বোরো চাষের উৎসব 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে শীত আর কুয়াশাকে উপক্ষো করেই জমি তৈরি করে তাতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে শুরু করেছেন  চাষিরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলের মাঠ জুড়ে ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষকেরা। জমিতে পানি সেচ, হালচাষ, বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে তৈরি জমিতে চারা রোপণের কাজ চলছে পুরোদমে।

তবে চড়া দামে নিতে হচ্ছে শ্রমিক। সার, কীটনাশক, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো চাষে হিমশিম খাচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন অনেক ভালো হবে প্রত্যাশা করেন। 

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে চলতি এই মৌসুমে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২২ হাজার ৫শ ৪০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে হাইব্রিড ৮ হাজার ৩শ ৪০ হেক্টর, উফশী ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর ও স্থানীয় জাত ১শ ৫০ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৬শ ১৫ হেক্টর। যা চলমান রয়েছে। এবারে

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪শ ৩২ মেট্রিকটন। কৃষকরা এক হাজার ১৩১০ হেক্টর জমি বীজতলা তৈরি করছেন।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে চলছে বোরো ধান লাগানোর ব্যস্ততা। কৃষাণ-কৃষাণী বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে জমিতে রোপণ করছেন। কেউ কেউ জমিতে পানি আটকানোর জন্য জমির আইল শক্ত করে বাঁধছেন, কোথাও পানির পাম্প ও শ্যালো মেশিন দিয়ে চলছে পানি সেচের কাজ। আবার কোথাও ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। কেউ চাষ করা জমি সমান করছেন। সব মিলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেন কৃষকদের দম ফেলার সময় নেই। এমনি দুপুরের খাবার জমিতেই সেড়ে নিচ্ছেন। বোরো ধান রোপণের শুরু থেকে কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ দিন। কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বোরো চাষিদের খরচ হয় প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। গেলো বোরো মৌসুমে ধানের দাম বেশি থাকায় এবারও দাম ভালো পাওয়ার আশায় আছেন চাষিরা।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফ আলী খন্দকার  জানান, তিনি প্রায় ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ধানের বীজ রোপন, কাদা করা, ওষুধ বাবদ এক হাজার টাকা, জমি চাষ করা বাবদ ৮’শ ২৫ টাকা, দিনমজুর কর্তৃক চারা রোপন ১ হাজার ৫০ টাকা, চাষের সার কেনা বাবদ ১ হাজার ৫’শ টাকা, ওষুধ প্রয়াগ ৪’শ টাকা, নিড়ানী দেয়া ৮’শ টাকা। এছাড়া ৩ মাস পানি সেচ বাবদ ২ হাজার ৬’শ ৪০ টাকা, ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার টাকা সহ অন্যান্য আরো ২ হাজার টাকা। এ নিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ বাবদ সর্বমোট খরচ হবে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়াসহ দাম ভালো পাওয়া গেলে এই খরচ আর পরিশ্রম দুই সার্থক হবে। কৃষক আশরাফ আলী খন্দকারের মতো একই কথা বলেন উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও।

শীত ও কুয়াশা অপেক্ষা করে কাজে আসা দিনমুজুর মঞ্জু মিয়া, আব্দুল হামিদ, মফিজল মিয়া, হাবলু চন্দ্র ও গোলজার আলী সহ অনেকে বলেন, এখন প্রচুর ঠান্ডা। ঠান্ডা অপেক্ষা করে পেটের দায়ে বোরো রোপন করতে এসেছি। আমাদের যা মজুরি দেয়া হয় তাতে সংসার পরিচালনা করা অনেক কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, কৃষকদের লাইন-লোগো পদ্ধতি ব্যবহার করে চারা রোপণের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কারণ এতে রোগবালাই কম হওয়াতে ফলন বৃদ্ধি পাবে। কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আমরা কাজ করছি। এছাড়া বোরো চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে। 

আরও খবর

Sponsered content