নির্বাচিত

আজকের এইদিনে বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়ে লক্ষীপুরের উপকূলবাসি আবেগপ্লুত ছিলেন

  প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৮:১৩:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষীপুর প্রতিনিধি :

১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান লক্ষীপুরের রামগতির চর পোড়াগাছায় পা ফেলছিলেন। এর-আগে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্থানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলায় পা রাখেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতি দখলদার পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের পতাকা লাভ করে। আজকের দিনটিতে সেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়ে লক্ষীপুরের উপকূলবাসী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ঢাকার বাহিরে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সফর রামগতি চর পোড়াগাছায়। একটি কালো হেলিকপ্টারে আসেন। ওইদিন নিজে মাটি ভরাটে অংশ নিয়ে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেখানে সর্বপ্রথম স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়ার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। সেই থেকে গুচ্ছগ্রামটি ‘শেখের কিল্লা’ নামে সুপরিচিত। এদিকে এ স্থানটিতে আগামি প্রজন্মের কাছে স্বরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি স্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রামের কাজ শুরু হয়। এতে নতুন করে ২৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করার কথা রয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে শিশু পার্ক, অডিটোরিয়াম, কাঁচা বাজার শেড, কয়েকটি দোকানঘর ও বিশুদ্ধ পানির ট্যাংক। খুব শিগগিরই এ প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে বলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। তবে দিনটি ভুলে গেছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেই। দলীয় বা প্রশাসনিকভাবে কোন ধরণের কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যা হতাশাজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা। ওই সময় ২১০ ভূমিহীন পরিবারের প্রত্যেককে দুই একর ২০ শতক করে (জমি) চাষাবাদের জন্য আর বসবাসের জন্য ৩০ শতাংশ জমি দেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তী ১৯৭২-৭৪ সালে বরাদ্দ পাওয়া জমিতে ধীরে-ধীরে বসতি গড়ে উঠে। বর্তমানে এ গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারা স্বাবলম্বী।

৭২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত শেখের কিল্লা স্থানটি পরিদর্শন করেন। তখন সর্বসম্মতিক্রমে জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষায় সেখানে শেখের কিল্লার পরিবর্তে ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা’ নামকরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরে ২০২০ সালে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি স্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রামের কাজ শুরু হয়। আগামি ১৩ মার্চ প্রকল্পটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে দিনটি এলেই সেদিনকার প্রত্যক্ষদর্শীরা বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চারণ করে থাকেন। এছাড়া এখানে ঘুরতে আসা অন্যান্য এলাকার মানুষজনকেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়ে তারা গল্প করেন বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আশরাফ উদ্দিন নামে সেখানকার এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি সবকিছুই মেঘনার ভাঙনে হারিয়ে যায়। তখন আমার বয়স ১৪-১৫ হবে। বাবা-মা আমাদের নিয়ে খুব দুঃখকষ্টে এখানে-সেখানে থাকতেন। হঠাৎ একদিন বঙ্গবন্ধু আমাদের চর পোড়াগাছায় আসেন। সব চর ছিল। কয়েক মাইল দূর থেকে মানুষ বঙ্গবন্ধুকে একজন দেখতে আসেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সবার চেয়ে উঁচু (লম্বা)। তিনি নিজ হাতে মাটি কেটে (স্থানীয়) আজাদ নেতার মাথায় তুলেন। আমাদের ভূমিহীনদের জমি দিয়েছেন। বর্তমানে আমি তার দেওয়া জমিতে স্ত্রী ও পাঁচ সস্তানকে নিয়ে বসবাস করি। যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, তারা মানুষ নয়। আল্লাহ তাদের সবার যেন উপযুক্ত বিচার করেন। আব্দুল হাসিম নামে একজন বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন আমার বয়স ১৮ বছর হবে। আমার স্পষ্ট সবকিছু মনে আছে। বঙ্গবন্ধু একটি কালো হেলিকপ্টারে করে আসেন। প্রথমে আমরা সবাই ভয় পেয়ে দূরে সরে গেলাম। বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টার থেকে নেমে দুই হাত দিয়ে চারপাশের মানুষগুলোকে তার দিকে ডাকেন। তখন থেকে বঙ্গবন্ধুকে একজন ভালো মানুষ ও নেতা মনে করি। অল্প দেখাতেই বুঝেছি তার মাঝে বিন্দুমাত্র অহংকার ছিলো না। এমন নেতাকে যারা হত্যা করেছে তারা ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিনের কথা মনে হলেও এখনো কেঁদে উঠি। প্রত্যক্ষদর্শী আবুল কালাম বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে মাটি কেটেছিলেন। এরপর রাস্তায় মাটি ফেলে কাজ উদ্বোধন করেছেন।

ওই রাস্তাটি এখন রামগতি-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়ক হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় আজ আমরা নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপহার পাওয়া কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকানির্বাহ করছেন তারা। চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বলেন, তার বাপদাদারা যে ভিটেমাটিতে বসবাস করে এবং সেই যেখানে থাকেন ওই সম্পত্তি বঙ্গবন্ধু তাদের দান করছে। সেই জমিতে কৃষিকাজ করে তারা আজ অনেক ভালো আছে। ২১০ পরিবারের মাঝে তারা ও একপরিবার। তিনি আরও জানান তার সৌভাগ্য হয়নি বঙ্গবন্ধুকে দেখার। কিন্তু তার স্বপ্ন নিশ্চয়ই একদিন শেখের বেটি শেখ হাসিনা একদিন তার বাবার পদচিহ্ন খুঁজতে আসবে এ গুচ্ছগ্রামে আসবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দীন জানান, সেদিন আমি খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখছি। কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া জমিতে চাষাবাদ করে আজ আমরা স্বাবলম্বী।

১৯৭২ থেকে ২০২৩ এ ৫১ বছরের আমাদের এ গুচ্ছগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করছে বঙ্গবন্ধুর কন্যার শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর যে পদচিহ্ন রয়েছে আমাদের চর পোড়াগাছায় গুচ্ছগ্রাম জুড়ে। আমরা চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার এসে তার বাবার স্মৃতিবিজড়িত গ্রামটি একনজর দেখে যাক। মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দীন আরও জানান, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবর্তী মানুষ গুলোকে দেখতে আসেন ১৭ নভেম্বর। সেদিন বঙ্গবন্ধু রামগতির দায়রা বাড়ীতে কবর জিয়ারত করেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে রামগতির বিবিরহাট মডেল স্কুল মাঠে বক্তব্য রাখেন। ওইখান থেকে জিবে করে গিয়ে জমিদার হাট হাইস্কুল মাঠে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। দেশ স্বাধীনের পূর্ব বঙ্গবন্ধু আমাদের এ রামগতিতে এসেছেন এটাও একটি ইতিহাস। ল²ীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ রাইজিং বিডিকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন সেটার গোড়াপত্তন কিন্তু জাতির পিতার হাত ধরেই এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় ১৯৭২ সালে ২০ ফেব্রæয়ারি চর পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রামে দুঃস্থ অসহায় মানুষের পুনর্বাসন করার জন্য ২১০ পরিবারটিকে ৫৯০ হেক্টর জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেন। বর্তমানে ওই স্থানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৯ কোটি টাকার কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভ, মডেল গুচ্ছগ্রামে কিছু ঘর তৈরি, একটি ছোট শিশু পার্ক, একটি মডেল মার্কেট এবং একটি পুকুর করা হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by