রংপুর

উলিপুরে চরাঞ্চল জুড়ে আলু উঠার উৎসব

  প্রতিনিধি ১৮ মার্চ ২০২৪ , ৪:২৪:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে চরাঞ্চল জুড়ে আলু উঠার উৎসব

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভেসে উঠা তিস্তার চরাঞ্চলগুলোতে আলু উঠানোর উৎসব দেখা যায়। চরাঞ্চল জুড়ে চোখ যেদিকে যায় শুধু আলু আর আলু। কৃষকেরা আলু তুলতে শুরু করেছেন। গত মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বুক ভরা আশা নিয়ে চরাঞ্চলের চাষীরা আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে আলুর দাম পওয়ায় কৃষকরা অনেক খুশি।

বর্তমানে তিস্তার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় আলু উঠানোর উৎসব চলছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ত্রিশ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে এক হাজার নব্বই হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে পঞ্চাশ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে।

এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আলু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়ায় চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকেরা জানান, এবারে তিস্তায় দু’দফায় বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তিস্তা নিকটবর্তী গ্রামের চাষিদের। ফলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, বাদাম ও মরিচ সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এবং সে গুলো চাষাবাদও করেছেন।

তার মধ্যে আলু চাষে বাম্পার ফলনে দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। এবার তুলনামূলকভাবে আলুর বীজ, সার ও কীটনাশক এর মূল্য বেশি হওয়ায় আলু চাষে অনেক খরচ করতে হয়েছে। আলুর বাজারদর তুলনামূলক বেশি থাকায় খরচের থেকে দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

জানা গেছে, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্যগোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, অন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেসে উঠা তিস্তার চরাঞ্চল জুড়ে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু চাষিরা। তারা জমিতে নারী, পুরুষ শ্রমিক দিয়ে সারাদিন আলু উঠিয়ে নিচ্ছেন। আবার কোথাও জমিতেই আলু উঠিয়ে পাইকেরিতে বিক্রি করছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকেরিতে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন হাটবাজারে। আলুর বাম্পার ফলনে ও দামে খুশি কৃষকেরা। আবহাওয়া ভালো থাকায়, আলুর বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। ফলনে ও দামে খুশি কৃষকেরা।

তিস্তা চরের আলু চাষি আব্দুল মতিন (৬৭) জানান, এবারে আলু চাষ করেছেন প্রায় ১৬ একর জমিতে। একর প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। মোট খরচ হয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা। আলুর আশা করছেন ২ হাজার ৫০ বস্তা। প্রতি বস্তায় আলুর ওজন ৬০ কেজি। বর্তমান পাইকেরিতে আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রতি বস্তা আলু দাম হয় ১৮’শ টাকা। ২ হাজার ৫০ বস্তা আলুর দাম হয় ৩৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। যা খরচের দ্বিগুণ লাভের আশা।

এছাড়াও তিস্তার বিভিন্ন চরাঞ্চলের আলু চাষিদের মধ্যে রওশন আলী, ছক্কু মিয়া, ফুল মিয়া ও ওবায়দুল হক ভোলা সহ আরও অনেকে বলেন, এবারে চরাঞ্চলে আলুর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজার দর গত বারের চেয়ে অনেক বেশি। এবারে দুই দফা বন্যা হওয়ায় জমিতে পলি পড়ে স্তর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, কৃষকেরা তিস্তার বিভিন্ন চরাঞ্চলে আলু উত্তোলন শুরু করেছেন। আলু চাষিদের কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করায় আলুর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কৃষকেরা বর্তমান বাজারে আলুর দাম বেশ ভালো পাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা হওয়ায় জমিগুলোতে পলির স্তর পড়েছে। সে কারণেই আলুর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। চরাঞ্চলের চাষিরা আলু উঠানো শুরু করেছেন। বাজারে আলুর দাম ভালো থাকায় আলু চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by