বাংলাদেশ

এপ্রিল মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৪৩

  প্রতিনিধি ৭ মে ২০২২ , ৪:৪১:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে অহরহ মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ছবি: সংগৃহীত"

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

সারাদেশে গত এপ্রিল মাসে ৪২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নারী ও ৮১ শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৫৩৪ জন। আর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬১২ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।

আজ শনিবার (৭ মে) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, এপ্রিল মাসে সংঘটিত সব দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২০৬ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এটি মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর গত মাসে ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত মাসে উল্লেখিত সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হন। এটি মোট নিহতের ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৭ জন।

গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি ছয়টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আট জন নিহত হয়েছেন এবং ছয় জন নিখোঁজ রয়েছেন। একই সময়ে ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

সংস্থাটি বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৮ জন নিহত হয়েছে। মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৯ জন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৩১ জন, অর্থাৎ ৭৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

ট্রাকসহ পণ্যবাহী দ্রুতগতির যানবাহন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তাদের মতে, মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ড্রাইভারদের বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী যানবাহন চালানো এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে।

পথচারী নিহতের ঘটনাও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনি যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। ফলে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৭টি (৪৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৩টি (২৮ দশমিক ৮০ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৫টি (১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৬টি (১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ছয়টি এক দশমিক ৪০ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাসমূহের ৮৪টি (১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৭টি (৩৯ দশমিক ১১ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৩টি (২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৫২টি (১২ দশমিক ১৭ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২ দশমিক ৫৭ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৫৭ টি। (ট্রাক ১৪৪, বাস ৭৯, কাভার্ডভ্যান ২৬, পিকআপ ৫৮, ট্রলি ৯, লরি ১০, ট্রাক্টর ১৭, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৩, গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্যাঙ্কার ১, ডিএনসিসির ময়লাবাহী ট্রাক ১, ড্রামট্রাক ৭, মাইক্রোবাস ১৭, প্রাইভেটকার ১৪, অ্যাম্বুলেন্স ৩, পুলিশ জীপ ১, মোটরসাইকেল ১৯৭, থ্রি-হুইলার ১১৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-শিশুক) স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা-ডাম্পার) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১১ টি।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, প্রাণহানি ২৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ, প্রাণহানি ২২ দশমিক ০৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা পাঁচ দশমিক ৩৮ শতাংশ, প্রাণহানি চার দশমিক ৬০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা চার দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ছয় দশমিক ০৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ছয় দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রাণহানি সাত দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা পাঁচ দশমিক ৮৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিভাগে ১৩১ টি দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন নিহত হন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ঢাকায় ৩৯ টি দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত হন।

নিরাপদ সড়ক পেতে দেশবাসীকে যেমন আরো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে তেমনি নিজেদেরকেও অনেক সচেতন হতে হবে। গাড়িচালক থেকে শুরু করে পথচারী, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, যাত্রী সবাইকে ধৈর্য্যশীলতার সাথে সড়কে চলাচল করতে হবে। দেশের প্রচলিত সড়ক আইন সবাইকে মেনে চলতে হবে। অন্যথায় সড়কে মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by