দেশজুড়ে

করোনা আতংকের মধ্যে চট্টগ্রামে বেড়েছে গরমের তীব্রতা, অতিষ্ঠ জনজীবন

  প্রতিনিধি ১১ মে ২০২০ , ৩:১১:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজীব সেন প্রিন্স, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত দুদিনে চট্টগ্রাম জেলায় শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এই মুহূর্তে সবাই যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন ঠিক তখনই ফেঁপে উঠেছে প্রকৃতি। রমজানের শুরুতে বৃষ্টির দরুণ তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও গত কয়েক দিন ধরে দেখা দিল তীব্র তাপপ্রবাহ। এ কদিনে বৈশাখের তীব্র খরতাপ বেড়েই চলেছে। এতে হাঁসফাঁস করছে চট্টগ্রামবাসীর জীবন।

করোনা মহামারির কারণে এমনিতেই বন্ধ রয়েছে নগরের প্রায় শপিংমল ও দোকান পাঠ। তার উপর রমজানে মাস হওয়াতে বাইরের আবস্থা ভয়াবহ, রোদের তাপ, আর গরমে শ্রমজীবি মানুষদের যেন নিস্তার নেই। ঘেমে নেয়ে একাকার, যেন নাভিশ্বাস উঠছে চট্টগ্রামবাসীর।

সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। রমজান মাস হওয়াতে রাস্তার পাশের সরবত বিক্রেতাদেরও এখন দেখা মিলছে না। ফলে জীবিকার তাগিদে করোনার মাঝেও যেসব শ্রমজীবিরা রোদের তেজ উপেক্ষা করে ঘর থেকে রাস্তায় বের হয়েছেন তারাই পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।

এদিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস বলছে গরমের এ তাপদাহ আরো ৩-৪ দিন স্থায়ীত্ব হবে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া আফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, গত ক’দিন ধরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা দেখছেন না জানিয়ে তিনি গরমের তীব্র তাপদাহ আরো ৩-৪ দিন অব্যাহত থাকতে পারে এমনটাই জানিয়েছেন।

আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতা  অব্যাহত থাকলেও এর মধ্যে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল গতকাল রবিবার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এছাড়া, গত শনিবার ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গত শুক্রবার ৩৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস  তাপমাত্রা ছিল। এ অবস্থায় আগামী ১৮-২০ তারিখের মধ্যে সমুদ্রে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস।

গরমের এ তীব্র তাপদাহে জনজীবনের অবস্থা জানতে সরেজমিনে নগরীর ব্যস্ততম কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, করোনার প্রভাব ও সরকারি বিধি নিষেধ পালন করতে নগরীর অধিকাংশ মানুষ এমনিতেই ঘরে অবস্থান করছে ফলত রাস্তাঘাট এক প্রকার ফাঁকা। যানবাহন বলতে কয়েকটি স্থানে হালকা কিছু রিকশা দেখা গেলেও তীব্র তাপদাহতে চালকের শারিরীক দুর্বলতায় ঘুরছে না সেগুলোর চাকাও। রিকশা ফেলে সামান্য স্বস্তির আসায় রাস্তার একপাশে ছায়াতলে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে রিকশা চালকদের।

নগরীর পাথরঘাটার বাসিন্দা ব্যবসায়ি কাজল জানিয়েছে, এমনিতে করোনা আতংকে ঘরে থাকতে থাকতে বোর লাগছে তার উপর গরম। গত কয়েকদিন ধরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। নেই বাতাস, নেই বৃষ্টি, ঘরের বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস যেন লু-হাওয়া।

তীব্র গরমে চট্টগ্রাম জুড়ে ডায়রিয়া, জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়তে পারে মানুষের। সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রোগমুক্ত থাকতে কিছু নির্দেশনা দেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি।

তিনি বলেন, গরমের এ তাপদাহতে বাইরের খাবার বর্জন করে ঘরে নিরাপদে থেকে বেশি বেশি ফলমূল ও ঘন ঘন পানি পান করতে হবে। তেলের ভাজা-পোড়া খাবার খাওয়া যাবে না। তাছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে জ্বর, সর্দি-কাশি এসব হতে পারে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের মোবাইলে পরামর্শ নিতে পারে। তবে জ্বর সর্দি-কাঁশি তিন চার দিনের বেশি থাকলে আমাদের ফ্লু কর্নারে যোগাযোগ করে করোনা টেস্টের পরামর্শ দেন জেলা সিভিল সার্জন।

গতকাল রবিবার আবহওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দক্ষিণ/ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হতে ঘণ্টায় ১২-১৮ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। ফলে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সে সাথে রাত ও দিনের সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by