আইন-আদালত

গাজীপুরে সাংবাদিক মিলন হত্যাকারী ড্রাম ট্রাক চালক র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

  প্রতিনিধি ৭ আগস্ট ২০২৩ , ৪:৪৪:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

গাজীপুরে সাংবাদিক মিলন হত্যাকারী ড্রাম ট্রাক চালক র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার
ইনসেটে সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলন

বহুল আলোচিত গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক ভোরের দর্পণ ও করতোয়ার জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে বেপরোয়া গতিতে চলমান ডাম্প ট্রাকের চাপায় পিষ্ট করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার আহাদ মিয়াকে মুন্সিগঞ্জে লৌহজং থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

গ্রেফতারকৃত চালকের নাম আহাদ মিয়া (২৬)। তিনি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মোঃ আতিক মিয়ার ছেলে। আজ সোমবার (৭ আগষ্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।


এদিকে, সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনের হত্যাকারী চালককে গ্রেফতারের করায় মিলনের সহকর্মী সাংবাদিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। একই সাথে তার সহকর্মীরা গ্রেফতার আসামীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে মিলন হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবী জানিয়েছেন।


সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, গত ৪ আগস্ট শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কোর্টবাজালিয়া বাজার এলাকায় বেপরোয়া গতির বালুবোঝাই একটি ড্রাম্প ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো ট-১৭-১০৮১) চাপায় প্রবীণ সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলন (৫২) নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রিমিন হোসেন বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র‌্যাব বর্ণিত ঘটনায় ঘাতক চালককে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়,এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এবং র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক ট্রাক চালক আহাদ মিয়াকে গ্রেফতার করে। প্রাথথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ট্রাক চালক দুর্ঘটনার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, গ্রেফতারকৃত আহাদ গত ০৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সকালে বালু ভর্তি ড্রাম ট্রাক নিয়ে কাপাসিয়া থেকে চাঁদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ট্রাকটিতে অতিরিক্ত ওজনের বালু বোঝাই থাকা সত্ত্বেও সে তারাতারি পৌঁছানের জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাতে থাকে। পরবর্তীতে সে সকাল আনুমানিক সোয়া নয়টায় সময় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কোর্টবাজালিয়া বাজারে পৌঁছালে মোটরসাইকেল যোগে সংবাদ সংগ্রহ কাজে কাপাসিয়া যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে ভিকটিমকে বেপরোয়া গতির ড্রাম ট্রাকটি চাপা দিলে ভিকটিম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। দুর্ঘটনার পর ঘাতক ট্রাক চালক ঘটনাস্থল হতে ট্রাকটি ফেলে কৌশলে পালিয়ে যায়।


র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আহাদ জানায় যে, গ্রেফতারকৃত আহাদ গত ৭ বছর ধরে মাহিন্দ্রা, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরণের গাড়ি চালিয়ে আসছিল। তার মাঝারী যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। এছাড়াও ট্রাকটির ধারণ ক্ষমতা ৮ টন থাকা সত্বেও সে আনুমানিক ১৪ টন ওজনের বালু বোঝাই করে গাড়িটি চালিয়ে আসছিল। দুর্ঘটনার পর সে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে কোর্টবাজারে আসে এবং অটোযোগে কালিগঞ্জে চলে যায়। পরবর্তীতে সে সেখান থেকে তার বাড়ি পৌঁছায় এবং উক্ত দুর্ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানতে পারলে গ্রেফতার এড়াতে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া বরুন সড়কের কোটবাজালিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে একটি ড্রাম ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর ও কাপাসিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকগণ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে দুর্ঘটনা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।


মনজুর হোসেন মিলন নিজের মোটর সাইকেল যোগে তিনি কাপাসিয়ার দিকে আসছিলেন। পথে তিনি কথিত দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি ড্রাম ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন, কিন্তু তার মোটর সাইকেল সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। এসব বিষয় দেখে ও স্থানীয়দের বর্ণনা শুনে ধারণা করা হয়, ড্রাম ট্রাকের চালকের সাথে বাক বিতন্ডার পরে চালক শেখ মনজুর হোসেন মিলনকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।

মঞ্জুর হোসেন মিলনের অসুস্থ্র স্ত্রী রিমিন আক্তার, তার ভাই কামাল হোসেন অভিযোগ,এটা পরিকল্পিত হত্যা। তাঁর স্বামীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিঁনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।

মিলনের পরিবারের অভিযোগ, এঘটনায় পরিবারের পক্ষে প্রথমে ছোট ভাই কামাল হোসেন ড্রাম ট্রাকের চালকের সাথে বাকি বিতন্ডার পরে চালক মিলনকে ট্রাকের নীচে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যা করে বলে এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সেই এজাহার গ্রহণ করেনি। পরে এজাহার পরিবর্তন করে মিলনের স্ত্রীকে বাদী করে সড়ক দুর্ঘটনায় ড্রাম ট্রাকের চাঁপায় মিলন নিহত হয়েছে মর্মে এজাহার নিয়ে মামলা রেকর্ড করে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by