ঢাকা

চৈত্রের দাবদহে বেড়েছে হাতপাখা কারিগরদের ব্যাস্ততা

  প্রতিনিধি ৪ এপ্রিল ২০২২ , ৭:৪৮:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রতন মাহমুদ (পাংশা, রাজবাড়ী প্রতিনিধি):

চৈত্রের তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই এখন সর্বত্র কদর বেড়েছে হাতপাখার। আর তাই এ পাখা তৈরির কারিগরদের এখন যেন নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। এই গরমে মানুষকে একটু শান্তির পরশ দিতে দিন-রাত মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রাজবাড়ীর হাতপাখা কারিগররা।
কেউ পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ করছে সেলাই, কেউ ব্যাস্ত রঙ শলাকাঠি বাঁধায়, কেউবা আবার তৈরিকৃত পাখাগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে বাঁধছে বোঝা।

সরজমিনে জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা, কলিমহর, কসবামাজাইল ইউপিতে ও কালুখালী উপজেলার মদাপুর এবং মাঝবাড়ি ইউপি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব পুরুষের ব্যবসা ধরে রেখে এখনো সংসার চালাচ্ছে পাখা কারিগররা। জেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালি উপজেলার ২০০টি পরিবার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এর মধ্যে জেলার পাংশা উপজেলায় প্রায় ১০০ পরিবার পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। গরম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাজ বেড়ে গেছে। একটি পাখা তৈরি করতে ১০-১২টি হাতের ছোয়া লাগে বলে জানান কারিগররা।

বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি অনেকে এ কাজটি করছে। কিন্তু তাদের পুঁজি কম। কাচামালের দাম যখন কম থাকে তখন তারা কিনে স্টক করতে পারেন না। তাই তারা সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের দাবিও জানান।

পাখা কারিগর বাচ্চু মিয়া জানান, তাদের পূর্ব পুরুষরা এই তালপাখা তৈরি করে জীবন জীবিকা চালাতো। তারাও পূর্ব পুরুষের কাজটি ধরে রেখেছেন।

পাংশা উপজেলার সাঁজুরিয়া গ্রামের সবচেয়ে পুরাতন পাখা করিগর ফজলুর রহমান ওরফে ফজু কারিগরের কাছে হাতপাখা তৈরি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করা হয় শীতকালে। গ্রীষ্মকালেও কিছু তালপাতা সংগ্রহ করা হয়। নিজ জেলা রাজবাড়ী, মাগুরা ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা পাতা সংগ্রহ করেন। এই তালপাতা এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর পাতা ভিজে নরম হয়ে গেলে পানি থেকে উঠিয়ে তা কেটে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা পাতায় দুটো পাখা হয়। এই পাতা পুনরায় বেঁধে রাখা হয়। এভাবে রাখার পর গরমের মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আবার পানিতে ভিজতে দেয়া হয়। পানিতে দেবার পর পাতা নরম হয়ে গেলে শুরু হয় মূল পাখা তৈরির কাজ। সাধারণত পরিবারের বড়রা পানিতে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া পাতা ছাড়িয়ে পাখা আকৃতির করে চারিদিক কেটে সমান করে থাকে।
আর বাড়ির মেয়েরা সেগুলো বাশের সলা দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরিবারের ছোট সদস্যরা এগুলো সুচ আর সুতা দিয়ে সেলাই করে থাকে। এভাবে ব্যবহারের উপযোগী একটি তালপাখা তৈরি হয়।

পাখা তৈরিতে লোকবল ও খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি পাখা তৈরি করতে ১০-১২টি হাতের স্পর্শ লাগে। ফরিদপুর এলাকা থেকে ১টি তালপাতা ১০-১৫ টাকা দরে ক্রয় করি। একটি তালপাতা থেকে ২টি পাখা তৈরি করা যায়। সব মিলিয়ে একটি পাখা তৈরি করতে আমাদের ১৫-১৬ টাকা খরচ হয়।

পাখা কারিগর ইয়ার উদ্দিন জানান, তাদের তৈরিকৃত পাখা পাইকারি ও খুচরা দুই ভাবেই বিক্রি করে থাকে। তাদের থেকে পাইকাররা প্রতিপিস পাখা ১৫-১৮ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে খুচরা ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করে। মূলত পাখা ব্যবসা থাকে গরমের ৩-৪ মাস। অন্য সময় তারা কৃষি কাজ করেন।

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by