প্রতিনিধি ২৭ মে ২০২১ , ৭:২৮:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার বাজারগুলোতে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় লিচুর গ্রাম নামে পরিচিত পৌর শহরের মুন্সিরহাটে রাস্তার ধারে অস্থায়ী ভিত্তিতে হাট বসেছে। হাটে ছোট নারী-শিশু, যুবক, বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সীরা লিচুর পসরা নিয়ে বসেছেন। বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন লিচু। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় আশপাশের বিভিন্ন বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে রাস্তার ধারে দোকান সাজিয়ে বসেছেন তারা। আর ক্রেতাও ভিড় করছেন প্রচুর। জানা যায়, পৌর শহরের মুন্সিরহাট এলাকায় রাজা, বাদশাসহ বেশ কয়েকটি লিচুর বাগান রয়েছে। বাগানগুলো চাঁপাই নবাবগঞ্জের মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা চুক্তিভিত্তিক কিনেছেন।
এরমধ্যে ব্যবসায়ী আজহারুল ইসলাম ১১টি বাগান কিনেছেন। বর্তমানে গোলাপী, চায়না-৩, মাদ্রাজী ও বোম্বে জাতের লিচু গাছ থেকে পারা শুরু হয়েছে। আর বাগানের চারপাশের এলাকার মানুষ বাগানে গিয়ে লিচু তুলে দিয়ে ও কুড়িয়ে ৫-৭শ লিচু সংগ্রহ করছে প্রতিদিন। সেগুলো বাড়ির পাশেই মহাসড়কের এক ধারে বিক্রি করছেন বিভিন্ন দামে। এতে করে নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধরা লিচুর মৌসুমী ব্যবসা করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
লিচু বিক্রি করতে আসা মুন্সিরহাট গ্রামের ছোট শিশু হৃদয় বলে, বাগানে লিচু ভেঙে দিয়ে ৫শ লিচু পেয়েছি। সেগুলো এখানে বিক্রি করছি। লিচু কিনতে আসা পৌর শহরের টিকাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হুসনেয়ারা বলেন, এ সময়টাতে প্রতি বছর এখানে আসি। এবার প্রতি ১শ লিচু ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী খুব স্বল্প দামে ভাল লিচু পাওয়া যাওয়ায় এখানে কিনতে এসেছি।
এছাড়াও পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু। এর মধ্যে পৌর শহরের কালিবাড়ী বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও রোড, মুন্সিরহাট, গোধুরী বাজারসহ জেলার অন্যান্য বাজারে গোলাপী, চায়না-৩, বোম্বে, মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি ১শ গোলাপী জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে দেড়শ টাকায়, এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকায়। এগুলোর মধ্যে উৎপাদনকৃত চায়না-৩ জাতের লিচুর চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এই লিচু খেতেও যেমন স্বুস্বাদু তেমনি ছোট আটি ও মাংসে পরিপূর্ণ থাকায় বিক্রিও হয় প্রচুর।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ৮৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গোলাপী, মাদ্রাজী, চায়না-৩ জাতের লিচু বাজারে বিক্রি হতে শুরু করলেও আর কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যান্য জাতের লিচুও বাজারে উঠবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন জানান, এ বছর লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। জেলার লিচু বাগান মালিকদের কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। লিচুতে এ বছর পোকা-মাকড় তেমন একটা নেই। করোনা পরিস্থিতির কারণে পরিবহনে কিছুটা সমস্যা থাকলেও ধীরে ধীরে তা স্বাভাকি হওয়ায় কৃষকেরা লিচুর ভাল দাম পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।