রাজশাহী

দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বড়াল

  প্রতিনিধি ২৯ জুন ২০২০ , ৭:৫৭:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : দখল-দূষণ ও কচুরিপানার স্তুপে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা বড়াল নদ। দেশের বিভিন্ন নদ-নদী যখন বর্ষার পানিতে টইটম্বুর তখন বড়াল নদের করুণ পরিণতি! নদের দুই পাড় দখল করে পাকা স্থাপনা, বসতবাড়ি, গরু-মুরগীর খামার গড়ে উঠেছে। নদের মধ্যে ফেলা হচ্ছে নানা রকমের বর্জ্য।ে আর দখল কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন খনন না করা এবং ময়লা আবর্জনার স্তুপে বড়াল নদ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদ।
শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, একসময় বিভিন্ন পয়েন্টে ক্রসবাঁধের কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল বড়াল নদের অস্তিত্ব। কিন্তু সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ক্রস বাঁধ তুলে দিয়ে বেশ কয়েকটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু পৌর শহরের জারদ্রিস মোড়, নতুন বাজার, খেয়াঘাট, দোলং, রামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় নদের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পুরো নদ জুড়ে জমে গেছে কচুরীপানার স্তুপ। নদের তলদেশে জমাট বেঁধেছে পলিথিনের স্তর। পৌরসভার পয়ঃবর্জ্য,গৃহস্থালী ও গরু-মুরগীর খামারের বর্জ্যে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে নদটি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পুরাতন বাজার এলাকার। সেখানে পৌর সদরের সবচেয়ে বড় বাজার বসায় মাংস ও সবজি বিক্রেতারা বর্জ্য ও সবজির উচ্ছি¡ষ্ট অংশ বড়াল নদে ফেলছেন।
শুধু তাই নয়, হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে বড়াল নদে। এছাড়া পৌরসভার ড্রেন দিয়ে সরাসরি বর্জ্য মিশে যাচ্ছে নদের পানিতে। বেড়েছে মশার উপদ্রব। এতে করে মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নদটি খনন না হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমেও বড়াল নদে পানির দেখা নেই। অথচ উপজেলা প্রশাসন ময়লা না ফেলতে নদের বিভিন্ন পয়েন্টে সাইনবোর্ড টাঙিয়েই দায় সেরেছে। দখলমুক্ত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই-এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
পৌর শহরের দোলবেদীতলা এলাকার বাসিন্দা রনি রায়, পাঠান পাড়া মহল্লার মনজুর রশিদ বাবু, জানান, একসময় এই বড়াল নদে সাঁতার কেটেছি। নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু নদটি দেখলে এখন কষ্ট লাগে। নদ এখন আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর কঠোর হলে অনেক আগেই বড়াল নদ প্রাণ ফিরে পেতো বলে জানান তারা।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান বলেন,বড়াল নদ দখলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকজন জড়িত। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। প্রশাসনও নির্বিকার। তবে দখলকারীদের উচ্ছেদ, কচুরীপানা অপসারণ এবং ড্রেজিং করলে বড়াল নদ প্রাণ ফিরে পেতো বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন,আসলে করোনা পরিস্থিতির কারণে সেভাবে নজর দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে দখলদার এবং কচুরীপানা অপসারণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আর নদীতে যারা বর্জ্য ফেলে দূষিত করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by