দেশজুড়ে

ধংশের দ্বার প্রান্তে চার’শ বছরের স্থাপত্য মঘিয়ার কালী মন্দীর

  প্রতিনিধি ৩ জুন ২০২০ , ৭:৫৬:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : প্রায় চার শতাধিক বছরের পুরনো স্থাপত্য নিদর্শন পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায় ধংশের দ্বার প্রান্তে। সংরক্ষণের অভাবে মূল্যবান কষ্টি পাথরের দক্ষিণাকালী মূর্তি শিব লিঙ্গ চুরি হয়ে গেছে। এখন বিনষ্ট হচ্ছে চতুর্ভূজ আকৃতির ইট কারুকাজ খচিত মন্দিরের ভবন। মাটির নিচেয়ও রয়েছে অনেক নিদর্শন। জানালেন সুব্রত রায় চৌধুরী (৫৪) এই স্থাপত্য এলাকা সংরক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে একদিকে ইতিহাস রক্ষিত হতে পারে। অন্যদিকে,পর্যটনের মাধ্যমে আয়ের পথ তৈরি হতে পারে। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় অরক্ষিত আছে এই স্থাপত্য।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কচুয়াচিতলমারী প্রধান সড়কে মঘিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অদূরেই এই মন্দির দুটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মন্দিরের সামনের মাঠে আছে অন্য কোনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। তার পূর্ব দিকে পুকুর। শীতলা মায়ের বিশালাকার বৃক্ষাদি। চারিদিকে বসতিহীন ফাঁকা মাঠ। মন্দির দুটিও জনমানবহীন। এখান হতে প্রায় পাঁচ শত গজ উত্তরে জমিদার বা রাজবাড়ি।

বাগেরহাটেরমঘিয়া রাজবাড়িদেশবিদেশে পরিচিত নাম। কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নে এই জমিদার বাড়ির অবস্থান। জমিদারী আমলের শুরুর দিকে ওই শিব মন্দির দক্ষিণাকালী মন্দিরসহ অন্যান্য স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন এখানকার জমিদার। এই জমিদার বংশের সন্তান সুব্রত রায় চৌধুরী। তিনি কচুয়া সরকারি সিএস পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।

তিনি জানান, বাগেরহাটে আউলিয়া ¤্রাট খাঁজা খাঁনহাজান আলীর আগমন তার স্থাপনা সমূহ নির্মাণের সমসাময়িককালে এখানে এই শিব দক্ষিণাকালী মন্দির, জমিদার বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়। সম্ভবত গন্ধর্ব নারায়ণ চৌধুরীরর জমিদারি সময়ে ওই মন্দির নির্মিত হয়। জমিদাররা তৈরি করলেও এখন সার্বজনীন রূপ নিয়েছে সার্বজনীন শিব দক্ষিণাকালী মন্দির কমিটির সভাপতিও সুব্রত রায় চৌধুরী।

তিনি আরো জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে নানা অনুষ্ঠান হয়। ১৯৭৭ সালে দক্ষিণাকালী মায়ের কষ্টি পাথরের মূর্তি চুরি হয়। ১৯৯০ সালে চুরি হয় কষ্টি পাথরের শিব লিঙ্গ। এরপর ১৯৯৬ সালে ভূবনেশ্বরীর কষ্টি পাথরের মূর্তি খুলনা যাদুঘর নিয়ে যায়। এখন বাকী যে স্থাপত্য আছে তা কালের স্বাক্ষী। অর্থাভাবে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে।     

সুব্রত রায় আরো জানান, জমিদার শিশির রায় চৌধুরীও এই বংশের সন্তান। আর্থিক দৈন্যতা এখন এমন পর্যায়ে যে, জমিদার বংশের উত্তরসূরী হয়েও শিক্ষকতা, কৃষিসহ সাধারণ পেশায় কাজ করে তারা জীবন ধারণ করছেন। জমিদার প্রথা বিলোপের পর হতে তাদের আর্থিক সংকট বাড়ে। তাই তাদের পক্ষে প্রাচীন স্থাপত্যসমূহ সংস্কার বা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এজন্যে তারা সরকারের প্রতœত্বত অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শিব মন্দিরের ফলকে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে মন্দিরটি সংস্কার করেন সুকুমারী চৌধুরানী সরজবালা চৌধুরানীর মেজ ছেলে বীরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীরর সহধর্মীনি ব্রহ্মময়ী শশ্রুমান কাদম্বিনী রায় চৌধুরানী তাদেরসহ অসংখ্য স্মৃতিবাহিত এই মন্দির। মঘিয়ার জমজমাট চৈত্র, বৈশাখী মেলা এই মন্দিরকে ঘিরেই হত বলে জানা যায়।

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিদেবনাথ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইতিহাস ঐতিহ্যবাহিত নিদর্শন সংরক্ষণ করা দরকার। এখানে সংরক্ষণ করে পর্যটন উপযোগী করলে একদিকে এলাকার আয় বাড়বে। অপরদিকে দর্শনার্থীরা অতীত সম্পর্কে জানতে পারবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by