আন্তর্জাতিক

নেতানিয়াহুকে হটিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া কে এই বেনেট?

  প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২১ , ৪:২৯:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

ইসরাইলের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক যুগের শাসনের অবসান হতে চলেছে।  নেতানিয়াহুকে দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছে বিরোধী জোট।  এই জোটের নেতা হিসেবে ইসরাইলের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নাফতালি বেনেট।

উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেটের সঙ্গে নতুন জোট সরকার গঠনে মধ্যপন্থি নেতা ইয়ার লাপিদ বুধবার পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন। সমঝোতা চূড়ান্ত হলে নেতানিয়াহুর টানা এক যুগের শাসনের অবসান ঘটিয়ে বেনেট হবেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

সবশেষ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন জিতে ইসরাইলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বেনেটের দল।

মার্চে অনুষ্ঠিত ইসরাইলের জাতীয় নির্বাচনে আসনের দিক দিয়ে নেতানিয়াহুর ডানপন্থি দল লিকুদ পার্টির পরেই রয়েছে লাপিদের দল ইয়েস আতিদ।

লাপিদকে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হলেও গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়।

ওই হামলার জের ধরে লাপিদের জোট শরিক হওয়ার দৌড়ে থাকা আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টি জোট সরকার গঠনের আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।  এর পরই বেনেটের দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  জোটভুক্ত দলগুলো এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে যে, বেনেট প্রথম দুবছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন।

বিবিসির খবর বলছে, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড়ে শেষ সময়ে এসে উগ্র জাতীয়তাবাদী বেনেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন লাপিদ।

সম্ভাব্য চুক্তি অনুযায়ী ১২০ আসনের ইসরাইলি পার্লামেন্টে মাত্র ছয় আসন নিয়েই প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বেনেট।

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী দুই বছরের জন্য ৪৯ বছর বয়সি বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। পরের দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ।

এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল খুব সামান্য হলেও একটি জায়গায় তারা সবাই এক— নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান। ৭১ বছর বয়সি নেতানিয়াহুকে উৎখাতে রোববার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সমর্থন নেন বেনেট।

বিবিসির প্রতিবেদনে নাফতালিকে ‘উগ্র-জাতীয়তাবাদী’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  আলজাজিরা তাকে পরিচয় করাতে গিয়ে ‘ডানপন্থি ধর্মীয় বক্তা’ উল্লেখ করেছে।

মার্কিন বংশোদ্ভূত বেনেট স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডো।  রায়ানা শহরে চার সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে তার বসবাস।

মিলিয়নিয়ার এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ২০০৫ সালে নিজের স্টার্টআপ ১৪৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে রাজনীতিতে নামেন। পরের বছর নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ নির্বাচিত হন।

২০১০ সালে নেতানিয়াহুর অফিস ছেড়ে দখলকৃত পশ্চিমতীরে ইহুদি সেটেলারদের হয়ে লবিং করা ইয়েসা কাউন্সিলের প্রধান হন।

রাজনীতিতে ঝড় তোলেন ২০১২ সালে। ওই সময় তিনি কট্টর ডানপন্থি জিউস হোম পার্টির দায়িত্ব নেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন।

২০১৩ সালে ফিলিস্তিনিদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওদের মুক্তি না দিয়ে হত্যা করা উচিত।’

এদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বেনেটের বিরুদ্ধে ‘জনগণকে ভুল পথে চালিত করা’ এবং ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’ করার অভিযোগ এনেছেন।

ইসরাইলের উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে ডানপন্থি শক্তির সম্ভাব্য জোটকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে সতর্ক করেছেন নেতানিয়াহু।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত জোট সরকারে ইসরাইলি রাজনীতির ডান, বাম এবং মধ্যপন্থি- সবারই সন্নিবেশ ঘটবে। এই দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকলেও তারা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে একমত।

নেতানিয়াহু জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর লাপিদ যিনি সাবেক একজন অর্থমন্ত্রী, তাকে ২ জুন পর্যন্ত নতুন সরকার গঠনের সময় দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ নির্বাচনে তার ইয়েশ আতিদ পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে আসে। প্রথম অবস্থানে ছিল নেতানিয়াহুর ডানপন্থি দল লিকুদ পার্টি।

১২০ আসনের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি আসন পেয়েছে বেনেটের দল, যা প্রস্তাবিত বিরোধী জোট গঠনে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম।

শনিবার রাতে, নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট এবং আরও একটি সম্ভাব্য জোট দলের নেতাকে জোট গঠনের প্রস্তাব দেয়, যাতে করে পালাক্রমে তিনজনই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

তবে তার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি নেতারা।  রোববারও একই প্রস্তাব দিয়েছিল লিকুদ পার্টি।

ইসরাইলের নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার শর্ত থাকায় কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পাওয়া সম্ভব নয়।  জোট সরকার গঠনের জন্য ছোট ছোট দলগুলোকেও দরকার হয়।

লাপিদকে প্রাথমিকভাবে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ১১ দিন ধরে গাজা সহিংসতার কারণে এই সময় কমে এসেছে।

ডানপন্থি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০০৯ সাল থেকে ইসরাইলে টানা ক্ষমতায়।  তার এ সময়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের বিচার চলছে আদালতে।  তবে তিনি নিজে এসব দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  সেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বেনেট।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by