চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে স্কুল ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা আটক-৪

  প্রতিনিধি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৭:১১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মিরসরাইয়ে স্কুল ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা আটক ৪

মিরসরাইয়ে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হেনস্থা ও স্কুল ছাত্রীর মায়ের পথ রোধ করে হত্যার হুমকির অপরাধে কিশোর গ্যাং এর ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মিরসরাই থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ গজারিয়া এলাকার এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ (২০), সাজ্জাদ হোসেন সাগর (২১), মো: শামছুদ্দিন প্রকাশ সালমান (২০) ও রিফাত হোসেন রিমন (২০) ।
রবিবার (১৭ সেপ্টম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগি স্কুল ছাত্রীর পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মিরসরাই থানা অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন নিতৃত্বে উপস্থিত অভিযান চালিয়ে ঘটনা স্থল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় এজাহার নামিয় ৫নং আসামী মো: সবুজ সহ আরো ৪ কিশোর গ্যাং পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নেয় জনৈক বেলায়েত হোসেনের স্কুল পড়ুয়া ১৩ বছরের কিশোরীকে স্কুলে যাতায়াতের পথে পাশ্ববর্তী ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা যৌন উত্তেক্ত করে আসছিল। উত্তেক্ত করার এ পর্যায়ে গত ১১ মে সিএনজি যোগে অপহরণ করার চেষ্টা করে ও যৌন হেনস্থা করে। অপহরণ করতে না পেরে ওই স্কুল ছাত্রীকে সিএনসি চাপা দিয়ে চলে যায়।

ওই ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর পিতা বেলায়েত হোসেন বাদি হয়ে কিশোর গ্রাং এর দুই সদস্য এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ ও ৫নং এজাহার নাময়ি আসামী মো: সবুজের নাম উল্লেখ করে বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিরসরাই থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিরসরাই থানা পুলিশ সবুজকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে ও প্রধান আসামী এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

পরবর্তীতে জামিনে এসে কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেরিয়ে এসে পুনরায় ১৪ সেপ্টম্বর ভোর সাড়ে ৬টায় ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অন্যথায় তাদের কিশোরি মেয়েকে অপহরণ পরবর্তী গণধর্ষণ করে হত্যার হুমকি দেয়। উক্ত ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর পিতা বেলায়েত মিরসরাই থানায় জিড়ি নং ৭১২ দায়ের করেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৪ মাস পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ওই ছাত্রীর।

এতে স্থানীয় ভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনা কে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি মিরসরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সাংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকেও অবহিত করা হয়। মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা প্রশাসনের সহায়তায় সোমবার (১৭ সেপ্টম্বর) সকালে ওই স্কুল ছাত্রীর মা আকলীমা আক্তার তার মেয়েকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান।

মেয়েকে বিদ্যালয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই সকাল ১০টার দিকে মঘাদিয়া ইউনিয়নের সাধুর বাজার সিএনজি ষ্ট্যান্ড পৌছলে সেখানে শুভ ও সবুজের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং এর ৭ থেকে ৮জন দেশিয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার পথ রোধ করে। এসময় কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা আকলিমা আক্তারকে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় অন্যথায় হত্যা করার হবে বলে জানায়।

কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা বলে বর্তমানে হত্যা করা হলেও ১ মাসের মধ্যে জামিন পাওয়া যায়। তাই বাড়াবাড়ি না করে ভালোয় ভালোয় যেন তাদের বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ থানা ও আদালত থেকে তুলে নেয়া হয়। বিষয়টি কিশোরীর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানতে পেরে থানায় খবর দিলে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং এর ৪জনকে আটক করতে সক্ষম হয়।
খবর নিয়ে জানা যায়, কিশোর গ্যাং সদস্যরা স্থানীয় ১১নং মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টারের অনুসারী। চেয়ারম্যন জাহাঙ্গীর হোসেন মাষ্টার ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ছত্রচায় থেকে কিশোর গ্যাংটি এলাকায় মাদক ব্যবসায়, মারামারি, লুটপাল, ছুরি-ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। আটক কৃত সাজ্জদ হোসেন সাগর ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক, রিফাত হোসেন রিমন একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগ কর্মী এছাড়া মো: শামছুদ্দিন প্রকাশ সালমান, সবুজ ও শুভ চেয়ারম্যনের অনুসারী বলে জানা গেছে। চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টারের সাথে কিশোগ্যাং সদস্যদের ঘণিষ্টতার ছাবি পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার জানান, তারা ছাত্র রাজনীতি করে আমি এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা আমাকে অনুসরণ করে। কিন্তু আমি কোন অন্যায় কাজে কাওকে সমর্থন করিনা।

মিরসরাই থানা অফিসার ইনচার্জ জানান, বখাটেদের পূর্বেও একই ঘটনায় গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়েছিল। পুনরায় তারা জামিনে এসে স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে হুমকিদেয় ও সর্বশেষ তার মায়ের পথ রোধ করে ধারালো অস্ত্র পদর্শনকরে হত্যার ইঙ্গিত দেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৪জনকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরীন জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি মহোদয়কে অবহিত করা আছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই মোবাইল কোর্ট করার পক্ষে থাকলেও সেটি নানা কারনে সম্ভব হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by