রংপুর

পলাশবাড়ীতে সমন্বিত মৎস্য চাষে সাফল্য

  প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২২ , ৮:৪৫:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. শাহরিয়ার কবির আকন্দ, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) :

মাছ চাষের সাথে যখন অন্য কোন চাষ পদ্ধতি যেমন হাঁস, মুরগি ও ডেইরি একত্রে একই ব্যবস্থাপনায় এনে কম খরচে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তখন তাকে সমন্বিত মৎস্য চাষ বা সুসংহত মৎস্য চাষ এবং ইংরেজিতে ইন্টিগ্রেটেড ফিশিং ফার্মিং বলে। এই ধরনের চাষের মূল ভিত্তি হল এক চাষ পদ্ধতির বর্জ্য পদার্থ অন্য চাষ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা এবং কম খরচে উৎপাদন বাড়ানো। শুধুমাত্র মাছ চাষে সারা বছর যা খরচ হয় তার ৬০ শতাংশ মাছের খাদ্য ও সারে ব্যয় হয়। কিন্তু মাছ চাষের সঙ্গে হাঁস, মুরগি পালন করলে তাদের থেকে যে বর্জ্য পদার্থ বা মল পাওয়া যায় তা মাছ চাষের পুকুরে জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করলে পুকুরের মাছ প্রকৃতিক খাদ্যকণার সংখ্যা কণার সংখ্যা বৃদ্ধি করে, ফলে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। এছাড়াও এই সমস্ত বর্জ্য পদার্থের মধ্যে থাকা আপাচ্য খাদ্য কণাও মাছ ভক্ষণ করে। তাই এই ধরনের ফার্মিং ব্যবস্থাপনায় রাসায়নিক সার ও পরিপূরক খাদ্য ব্যবহার করা হয় না বলে চাষিকে আলাদাভাবে সার ও পরিপূরক খাদ্যের জন্য কোন ব্যয় করতে হয় না। সেই সঙ্গে হাঁস, মুরগির ডিম ও মাংস বিক্রি করেও চাষি আর্থিক স্বচ্ছতা ফিরাতে পারেন। যেমন গাইবান্ধা জেলার পলাশববাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আব্দুল লতিফ মিঠু তার নিজের তিন একর জমিসহ সালমারার বিলে গড়ে তুলেছেন বিশাল হাঁস ও মাছ চাষের খামার। ২০১৯ সালে করোনার কারণে সৌদি যেতে না পেরে বসে না থেকে তিনি গড়ে তোলেন এ হাঁস ও মিশ্র মাছ চাষের খামার। নাম দিয়েছেন, ‘শুয়াইব মৎস্য খামার’। হাঁস ও মাছ চাষের উপর তেমন কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইউটিউব দেখে আব্দুল লতিফ মিঠু মাছ ও হাঁসের খামারে ঝুঁকে পড়েন। বতর্মানে তার খামারে খাকী কেম্বল জাতের ৮শ ডিম দেওয়া হাঁস রয়েছে। সবগুলো হাঁস ডিম দেয়া শুরু না করলেও অর্ধেক হাঁস থেকে প্রতিদিন ডিম পাওয়া যায় তিন থেকে চারশটি। এখন তার মাসে আয় মাছ এবং হাঁস থেকে ৬০ হাজার টাকা।
সফল হাঁসের খামারি আব্দুল লতিফ মিঠু বলেন, আমি করোনার কারণে সৌদি যেতে পারি নাই। এসময়টা বসে যাচ্ছিল না। সালমারার বিলের পাশে আমার কিছু জমি রয়েছে। সেখানে প্রথমে মাছ চাষের পাশাপাশি কিছু খাকি ক্যাম্বল জাতের হাঁস পালন করি। এ হাঁস পালন করার জন্য আমাকে মাছের খাদ্য দিতে হয় না। হাঁসের বর্জ্য খেয়েই মাছ দ্রুত বৃদ্ধি হয়। প্রথম বছর লাভ না হলেও দ্বিতীয় বছরে এসে লাভবান হই। মাসে দু’জন শ্রমিক ও হাঁসের খাবার বাদ দিয়ে আমার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা বেকার ঘোরাফেরা করছেন তার বসে না থেকে হাঁস ও মাছ চাষ করুণ। আপনারা অবশ্যই এর সুফল পাবেন। তবে সততা থাকতে হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, পলাশবাড়ী উপজেলায় অনেক খামারি রয়েছেন যারা নিজ চেষ্টায় খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে না পারলেও নিয়মিত হাঁসের ভ্যাকসিন, টিকা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by