খুলনা

পুলিশ হেফাজতে আওয়ামীলীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২১ , ৩:২৮:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর প্রতিনিধি

পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত হয়ে ফিরলেও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে যশোর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান বিপুকে। যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর বুধবার বিকেলে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভতি করা হবে। বিপুর অভিযোগ পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাকে নির্মমভাবে প্রহর করা হয়। তিনদফা তাকে পেটানো হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অবশ্য পুলিশ সুপার দাবি করেছেন পুলিশ হেফাজতে কোন মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশলাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে। এ সময় মাহমুদ হাসান বিপুসহ অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয় পুলিশ। সোমবার রাতভর আটকে রাখার পর আন্দোলন-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ বিপুকে মুক্তি দেয়।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু জানান, সোমবার শহীদ মিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে মাহমুদ হাসান বিপু এগিয়ে যান। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারপিটে জড়িত নন। কিন্তু পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়। মাহমুদ হাসান বিপু অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে পুলিশ লাইনে আটকে রেখে রাতভর বেধড়ক মারপিট করেছে। তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তার সারা শরীরে কালশিটে পড়ে গেছে। দুই পা ফেটে গেছে। মাহমুদ হাসান বিপু আরও অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী এই নির্যাতন চালিয়েছে। অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে বলেছে, আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার গ্রুপ করিস্; শ্যূট করে দেবো!’

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, মাহমুদ হাসান বিপু’র সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। তার প্রেপার, ডায়াবেটিস রয়েছে। রক্তে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে এসেছে। চার সদস্যের মেডিকেল টিম তাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করেছে। মেডিকেল টিম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে।

এদিকে, মাহমুদ হাসান বিপুকে আটকের পর ওই রাতেই পুলিশশাহীন চাকলাদার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ ভাংচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আব্দুল খালেক, তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগ’র সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবলীগের সদস্য মনজুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় এই বাড়িগুলোতে ভাংচুর তাণ্ডব চালানো হয় বলেও নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক টিম গভীর রাতে তার বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শাহীন চাকলাদার এমপির প্রেসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালায়। যা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।

যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে মারপিট করা হয়েছে। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের আটক করেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে শারিরীকভাবে আঘাতের কোনো বিধান নেই। মঙ্গলবার বিকেলে নেতাদের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তির আগ পর্যন্ত নির্যাতনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by