ময়মনসিংহ

বকশীগঞ্জে অর্ধাহারে-অনাহরে মৃত গারো মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

  প্রতিনিধি ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ৪:০৬:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বকশীগঞ্জে অর্ধাহারে-অনাহরে মৃত গারো মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

জামালপুরের বকশীগঞ্জের উপজেলার দিঘলাকোনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্র। ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রতিবাদ করেন তিনি। আর এজন্য টানা সাত বছর কারাগারে থাকতে হয় মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রকে। টানা ৫২ বছর পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি মারা যান জেলার একমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক গোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্র। ১৫ জানুয়ারি তাকে গার্ড অব অনার দেন স্থানীয় প্রশাসন।

পরিবারের অভিভাবককে হারিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের স্ত্রী মিলন মারাক ও একমাত্র সন্তান জয় দাংগো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্র মারা যাবার দুই বছর পর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে পার্শ্ববর্তী শেরপুর জেলার বাসিন্দা সুবেন্দ্র সাংমা নিজেকে রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের সন্তান দাবি করে অভিযোগ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। এরপর দুঃখের দিন শুরু হয় জয় দাংগো ও তার পরিবারের। বন্ধ হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা।

এখন অর্ধাহারে অনাহারে চলছে মৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংসার। কান্না জড়িত কণ্ঠে রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের ছেলে জয় দাংগো বলেন-‘ বাবা মারা যাবার পর আমরা অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ি। এরপর আবার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবার কাছে গিয়েছি। যে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। সেই অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

সমাজসেবা সেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তবুও আমাদের ভাতা চালু হচ্ছে না।এই ভাতার উপর নির্ভর করে আমার সংসার চলতো। এভাবে চলতে থাকলে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই। মৃত মুক্তিযোদ্ধা রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের স্ত্রী মিলন মারাক বলেন-‘যুদ্ধের পর থেকে আমরা ভাতা পায়। হঠাৎ করে একটা অভিযোগের কারণে আমাদের ভাতা বন্ধ হয়ে গেলো। যে নিজেকে রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের সন্তান দাবি করছে জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বাবার নাম মহেন্দ্র মারাক। তার মা রিনিকা সাংমার জাতীয় পরিচয় পত্রে স্বামীর নাম মহেন্দ্র মারাক।

এসব বিষয় তদন্ত না করেই আমাদের ভাতা বন্ধ করে দিলো। সুবেন্দ্র সাংমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই বকশিগঞ্জ উপজেলা পরিষদে তদন্তের সময় স্বাক্ষ্য দেন উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা। তারা সকলে জয় দাংগো তার পরিবারকে মৃত রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের পরিবার বলে সাক্ষ্য দেন। মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন-‘রুইন্দ্র আমার সাথে ছিল। আমার সাথে ট্রেনিং করেছে। আমি ওদের কোম্পানি টু আইসি ছিলাম। এর ভেতর কোনো সন্দেহ নেই।

যারা এখন অভিযোগ দিয়েছে বা দাবি করছে তাহলে তাদের সাথে আমাদের দেখা হলো না কেনো? ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর বলেন-‘রুইন্দ্র মারাক এবেন্দ্রের ভাতার শুরু থেকে আমরা একসাথে ভাতা উত্তোলন করেছি। আরো বলেন-‘ যে অভিযোগ করেছে বা দাবি করছে। এই বিষয় নিয়ে আমরা তদন্তের সময় সাক্ষ্য দিয়েছি। তবুও কোনো কাজে আসছে না।

তবে এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারাজ অভিযোগকারী সুবেন্দ্র সাংমা।এসব বিষয়ে বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জান্নাত মোবাইল ফোনে বলেন-‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বন্ধ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by