রংপুর

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে হুমকির মধ্যে শতাধিক পরিবার

  প্রতিনিধি ২৮ মার্চ ২০২৪ , ৩:৫৫:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে হুমকির মধ্যে শতাধিক পরিবার

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তীরবর্তী মানুষেরা। এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। স্রোত কম থাকলেও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছেনা। বেশ কয়েক দিনে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ভাঙন এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ পরিবার।

এ পর্যন্ত বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবার গুলো মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। উপজেলার সাহেবের আলগা নামাজের চর এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদী ভাঙনে একর একর আবাদি জমি এবং বসতবাড়ি, বড় বড় গাছ ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

নামাজের চরের এলাকাবাসী জানান, এখানে যে ভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে এখানকার ২’শ থেকে ৩’শ পরিবার অসহায় হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়া গ্রামগুলোর মধ্যে দক্ষিণ নামাজের চর, খেওয়ার চর ও সোনাপুর সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম। এছাড়া ভাঙ্গনে হুমকির মধ্যে রয়েছে নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, নামাজের চর মহাবিদ্যালয়, নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ (খেয়ার চর) বাজারসহ ফসলি জমি। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার মানুষজন।

অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে দিন-রাত ব্যক্তি ও সামাজিক উদ্যোগে গাছের ডাল ও বস্তা ফেলে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের মানুষজন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকেরা জানান, আমরা কোন সাহায্য চাইনা তীব্র ভাঙন রোধ চাই। ভাঙন এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার জোর দাবি জানান। দক্ষিণ নামাজের চর এলাকার আনছার আলী (৫৫) জানান, আমার ৩ বিঘা জমিতে থাকা মরিচ ও বেগুনের ক্ষেত ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে চলে গেছে। আমার আর কোন আয় রোজগার নেই। আমি কীভাবে ছেলে মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকব। সংসার চালার কোন পথ পাচ্ছি না বলে জানান তিনি।

একই এলাকার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছালমা আক্তার (১৬) জানান, আমাদের বাড়ি ঘর ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা পরিবারের সবাই অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। রাত্রে ঘুম নেই পড়ালেখায় মন নেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।এছাড়াও ভাঙন কবলিত এলাকায় কয়েক দিনে ব্রহ্মপুত্র নদে বাড়ি ঘর বিলীন হওয়া মানুষের মধ্যে রব সরদার (৪০), শাহালম মিয়া (৩৫), হারুন মিয়া (৪৫), আমজাদ হোসেন (৬০) ও রহম আলী (৪৫) জানান, অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি।

আমরা সাহায্য চাইনা আমরা নদের ভাঙন রোধ চাই। এছাড়া ভাঙন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবি জানাচ্ছি। সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে আমার এলাকায় কয়েকটি জায়গার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব এলাকায় শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পড়িবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। পাউবোর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যে সব এলাকায় ভাঙন হচ্ছে সে সব এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। ভাঙন রোধে স্থানীয় লোকের সহযোগিতায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু হয়েছে প্রয়োজনে আরো ফেলানো হবে। কয়েক দিনের মধ্যে টেন্ডারের ৮’শ মিটার কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙন রোধে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছেন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারে কাজ শুরু হবে। আগামীতে নদী ভাঙন রোধে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by