রংপুর

ভ‚রুঙ্গামারীতে গম বীজ সংকটে দিশেহারা কৃষক বেশি দামেও মিলছে না

  প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর ২০২২ , ৭:৫৭:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. মনিরুজ্জামান, ভ‚রুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) :

কুড়িগ্রামের ভ‚রুঙ্গামারীতে গম চাষের ভরা মৌসুমে বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়তি দামেও মিলছে না গমের বীজ। চাষিরা ডিলারদের কাছে দিনের পর দিন ঘুরেও বীজ পাচ্ছেন না। জমি প্রস্তুত থাকলেও বীজ না পেয়ে সময়মত জমিতে গম বপন করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার কৃষকরা। অপরদিকে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম এবং চলতি মৌসুমে গম চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ায় বাজারে বীজের সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হয়। সেই অনুযায়ী ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের জন্য ২৩০ মেট্রিক টন গমবীজ প্রয়োজন। উপজেলায় বিএডিসির অনুমোদিত ১৭ জন বীজ পরিবেশক রয়েছেন। কৃষক পর্যায়ে বিক্রির জন্য তাদের ৩০ মেট্রিক টন গমবীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছ। আর উপজেলা কৃষি অফিস প্রণোদনার আওতায় ৩৬ মেট্রিক টন গম বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছে। যা মোট চাহিদার মাত্র ৪৫ ভাগ বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক প্রতি কেজি গম বীজের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫১ টাকা। আর ডিলার পর্যায়ে ৭ টাকা লাভে ৫৮ টাকায় বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে বিএডিসি। কিন্তু সেই বীজ ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা কেজিতেও মিলছে না। চাষিরা দিনের পর দিন ঘুরেও বীজ পাচ্ছেন না। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক উপজেলা শহরে এসে বীজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে প্রতি বস্তা (২০ কেজি) গম বীজ ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি দাম দিয়ে কিনছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষক। পাইকেরছড়া ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, এবার ৫ বিঘা জমিতে গম চাষের জন্য জমি তৈরি করেছি। ২ হাজার টাকা দামে মাত্র দুই বস্তা বীজ পেয়েছি। এতে অর্ধেক জমিও চাষ হবে না। বাকি বীজ সংগ্রহ করার জন্য এক সপ্তাহ থেকে ঘুরছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। ফজর আলী নামের আরেক কৃষক জানান, গম চাষের জন্য ৩ বিঘা জমি প্রস্তুত করেছি। কয়েক দিন থেকে দোকানে দোকানে ঘুরছি। কোথাও বীজ পাচ্ছি না। এক দোকানে এক বস্তা বীজ ২ হাজার ২০০ টাকা দাম চেয়েছে। দাম বেশি মনে হওয়ায় অন্য দোকানে গেছি। ফিরে এসে দেখি ওই দামে অন্যজন বীজ কিনে নিয়েছে।
বীজ বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গম বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। বিএডিসি যে পরিমাণ বীজ বরাদ্দ দিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন বহু কৃষক বীজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বীজ না পেলে এবার গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা প‚রণ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
বিএডিসির তালিকাভুক্ত বীজ ডিলার মেসার্স ভাই ভাই সার ঘর এর সত্বাধিকারি আবুল হাসেম জানান, এবছর মাত্র ১ টন তথা ৫০ বস্তা বীজ বরাদ্দ পেয়েছিলাম। তা ১১৭০ টাকা দরে দুই সপ্তাহ আগেই বিক্রি শেষ হয়েছে। প্রতিদিন অনেক কৃষক বীজ কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
আরেক ডিলার মেসার্স সাহা এন্ড ব্রাদার্স এ গিয়ে দেখা যায় সেখানেও কোন গম বীজ নেই। উপজেলা সদরের অন্তত ৭টি দোকান ঘুরে কোথাও গম বীজ পাওয়া যায়নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুজন কুমার ভৌমিক জানান, গত বছর প্রাকৃতির দুর্যোগ ও প্রচুর বৃষ্টির কারণে গমের আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। এতে কৃষক পর্যায়ে যে বীজ সংগৃহীত থাকে সেটা না থাকায় মূলত গম বীজের সংকট দেখা দিয়েজে। বিষয়টি বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by