চট্টগ্রাম

ভূমিহীন হয়েও জেলায় অন্যতম ধান বীজ কারিগর সুনাম অর্জন

  প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:২০:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভূমিহীন হয়েও জেলায় অন্যতম ধান বীজ কারিগর সুনাম অর্জন

এক সময় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে অনাহারে কাটত জীবন। করতেন দিন মজুরের কাজ। অর্থাভাবে স্ত্রী, শিশু সন্তানসহ সইতে হয়েছে পেটের ক্ষুধার জ্বালা। সেই ক্ষুধার তাড়না থেকে নিয়ে ছিলেন নিজের ও সমাজের মানুষের ক্ষুধামুক্তির অঙ্গীকার। জমি লিজ, বন্ধক, কর্ট নিয়ে ধান চাষ করতে করতে হয়ে উঠেছেন আধুনিক জাতের ধান বীজের কারিগর। সেই ভূমিহীন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করা মানুষটি এখন সহস্র কৃষকের বীজ সরবরাহের আস্হার প্রতীক।

কৃষি অফিসারের বক্তব্য ভূমিহীন হয়েও সারা দেশে ধান বীজ উৎপাদনে এমন ভূমিকা রাখা কৃষক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বলছি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের সোনালী কৃষক রফিক আহমেদ এর কথা। যিনি শূন্য থেকে একজন সোনালী কৃষকে রূপান্তরিত হয়েছেন। 

শুরুটা ২০০৮ সাল নাগাদ, স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার উপদেশে শুরু করেন ধান বীজ উৎপাদনের কাজ । স্বপ্ন ছিল এ দেশের মানুষের ভাতের অভার দূর করা, নিজের মত। প্রতিনিয়ত নানা সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছেন ধান বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের কাজ। রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইং এর বীজ ডিলার হিসাবে লাইসেন্স। এলাকাজুড়ে ব্যাপক সুনাম রয়েছে তার উৎপাদিত ধান বীজের। প্রতি বছর সে ৪-৫ একর অন্যের জমি লিজ, বন্ধক নিয়ে উন্নত জাতের ধান চাষ করেন। তা থেকে উৎপাদিত ধান বীজ সংরক্ষণ করে বিক্রি করছেন। আউশ, আমন ও বোরো মৌসুম মিলিয়ে প্রায় ১০-১২ টন বীজের ব্যবসা করে থাকেন সারা বছর। ধান বীজ বিক্রি করে তিনি আজ স্বাবলম্বী। 

সোনালী কৃষক রফিক আহমেদ সম্পর্কে জানতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা তিনি কৃষি কাজে সময় ব্যয় করেন। সারাদিন স্বপ্ন দেখেন কৃষি কাজ নিয়ে। নিজের চাষ করা জমি রক্ষণাবেক্ষণ, ধান কাটা, মাড়াই, বীজতলা পরিচর্যা, বীজ সংরক্ষণ, প্যাকিং, বিক্রয় সহ সকল কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করেন। আশেপাশের এলাকার সাধারণ কৃষকরা তার কাছ থেকে কৃষি পরামর্শ নিয়ে থাকে।

রফিক আহমেদ এর বীজ জেলার দেবিদ্বার, চান্দিনা, মুরাদনগর উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় ডিলাররা তার বীজ সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। 

উপসহকারী কৃষি অফিসার জিয়াউর রহমান বলেন, দীর্ঘ ২০ বছরে আমার চাকরির অভিজ্ঞতায় এমন পরিশ্রমী, উদ্যমী, সাহসী, জ্ঞানী কৃষক দেখি নাই। নিজস্ব জমি না থাকার পরেও দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের উন্নত ধান বীজ উৎপাদন করে দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। 

দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ৪ বছরের বেশি সময় যাবৎ বীজ উদ্যোক্তা হিসাবে ব্যবসা পরিচালানা করছেন রফিক আহমেদ। দেবিদ্বারে যোগদানের পর পরই আউশ মৌসুমে ব্রি ধান৯৮ জাতের বীজ সরবরাহ করি, যা সুলতানপুরসহ আশেপাশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। রোপা আমনে চাষ করেছেন ব্রি ধান৯৫ ও ব্রি ধান১০৩। জাত দুটিও ফলন সহ সার্বিকভাবে সকলের পছন্দ হয়েছে। বোরো মৌসুমে ব্রি ধান৯৬ ও ব্রি ধান৯২ এর ৩ টন বীজ বিক্রয় করেছেন।

নতুন করে দেয়া হয়েছে বিনাধান-২৫ ও ব্রি ধান১০৫ জাত দুটি। সকল জাতই প্রথমবারের মতো চাষ করে বীজ সংরক্ষণ করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। রফিক আহমেদ এর বীজ উদ্যোক্তা হিসাবে  সাফল্য ও নতুন নতুন জাত সম্প্রসারণে অবদান এদেশের কৃষির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by