চট্টগ্রাম

মতলব উত্তরে ‘দলীয় আন্তঃকোন্দলে’ ছাত্রলীগের কমিটি নেই ১২ বছর, ধুঁকছেন কর্মীরা

  প্রতিনিধি ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৬:১১:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাহফুজুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: দলীয় আন্তঃকোন্দল ও বহুমূখী নেতৃত্বের কারণে প্রায় এক যুগ ধরে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হচ্ছে না চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায়। বর্তমানে নির্দিষ্ট কোন নেতৃত্ব না থাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ব্যাপক গ্রুপিং ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সংগঠনটির নেতৃত্ব শূন্যতা, সাংগঠনিক স্থবিরতা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। সেই সঙ্গে নতুন কমিটির দাবিও জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটির স্থানীয় কর্মীরা।

এদিকে নতুন পদ প্রত্যাশি অনেকেরই বয়স শেষ, অনেকে বিয়ে করে ফেলেছেন, বর্তমান প্রার্থীদেরও অনিশ্চয়তা দিন কাটছে। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের নিকট অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার হচ্ছেনা। আর নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি না হওয়ায় পরিচয়হীন ছাত্ররাজনীতি থেকে অনেকেই ঘরমুখী হচ্ছেন বলে দেখা গেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, ‘এটি জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব। আমরা বড়জোড় সুপারিশ করতে পারি, এতে আমাদের কোনো হাত নেই।’

গত শুক্রবার দিনভর উপজেলা পরিষদ হলরুমে সাবেক ছাত্রলীগ ঐক্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান নেতৃবৃন্দ।

দীর্ঘ সময় কমিটি না হওয়া প্রসঙ্গে এসময় জ্বালাময়ী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একে একে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাবেক নেতাকর্মীরা।

নতুন নেতৃত্ব না আসায় ক্ষোভ জানিয়ে সাবেক নেতৃবৃন্দ জানান, নেতাদের মাই ম্যান খোঁজাখুঁজি, গ্রুপিং আর কোন্দলের কারণে কমিটি হচ্ছেনা। তাই ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সম্মেলন এবং নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সংগঠনটির কার্যক্রমেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। পাশাপাশি নেতৃত্বে পরিবর্তন না হওয়ায় অনেক মেধাবি ও সাংগঠনিক মনোভাবের শিক্ষার্থীরা যারা গঠনমূলক রাজনীতির মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আগ্রহী তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

এসময় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘কমিটিহীন নেতৃৃত্ব আসন্ন সংকটকালে আওয়ামীলীগের উপর অশনী প্রভাব ফেলবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে নতুন নেতৃত্বের দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আতিকুল ইসলাম শিমুলের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাজহারুল ইসলাম মিজান ও যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাড. জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল এমপি।

মতলব উত্তরে একটি পক্ষের অপতৎপরতায় কমিটি হচ্ছেনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাসে যেমনই হাজার হাজার যোগ্য নেতার জন্ম হয়েছে তেমনই কিছু সংখ্যক অযোগ্য নেতার জন্ম হয়েছে। যার কারণে মাঝে-মধ্যে বিতর্কিত হতে হয় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংঠনটিকে। এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই জানিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রুপের নেতাদের পিছনে ঘুরে ‘মাই ম্যান’ না হয়ে সকলে এক হয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয়ভাবে জোড়ালো আন্দোলন-অনশন-প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায় করুন।

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসা করে খাই। রাজনীতি করে আমার চলতে হয়না। নীতি-আদর্শ ও সংগ্রামী ভূমিকায় কাজ করলে রাজনৈতিক সফলতা আসবেই। এসময় ত্যাগী নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে অতীতের মতোই পাশে থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও তৎকালীন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজ শাখার প্রথম যুগ্ন-আহ্বায়ক পদে নির্বাচিত এই নেতা।

সভায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ উপ-কমিটির সদস্য আরিফ উল্যাহ সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক অ্যাড. মহসীন মিয়া মানিক, মতলব ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস রহমত উল্যাহ চৌধুরী, চট্রগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি জামাল হোসেন নাহিদ, বর্তমানদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা আবু হানিফ অভি, আবির হায়াত শিহাব, সাইফুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২০০২ সালে জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি অ্যাড. জসিম পাটওয়ারী ঘোষিত অ্যাড. মহসীন মিয়া মানিককে আহ্বায়ক ও মো. জসিম, আব্দুস সাত্তার খোকন, মো. জামাল, মিরাজ খালিদ ও শ্রী শ্যামলসহ ১৭ জনকে যুগ্ন আহ্বায়ক করে ৩ বছরের মেয়াদে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে সেই কমিটি দীর্ঘ ৯ বছর গড়ালেও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি।

সর্বশেষ ২০১১ সালের ১০ই জুন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন কতৃক মিনহাজ উদ্দিন খান কে আহ্বায়ক ও তামজিদ সরকার রিয়াদকে যুগ্ম-আহ্বায়ক নির্বাচিত করে মতলব উত্তর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করে। যদিও সেই কমিটি নিয়ে তখনই অনেক বিতর্ক ও বিরোধিতা হয়েছে। কমিটির কাগজের সাক্ষর ও সীল নিয়ে অনেক সন্দেহ ছিল তখনকার সময়ের সকল সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাদের।

তাই তখনকার সময়ের সকল সাবেক ও চলমান ছাত্রলীগ নেতারা এই কমিটিকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে তখনকার সময় চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগ মতলব উত্তরে একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

শুধু তাই নয়, একই ঘটনা বাকি কমিটিতেও। প্রায় ২০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ, ১৮ বছর ধরে যুবলীগ, কৃষকলীগ সহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেই সম্মেলন। ধুঁকে ধুঁকে দিন পার করছেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তবে নতুন নেতৃত্বে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করার প্রত্যয় সকলের। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নেতাকর্মীরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by