দেশজুড়ে

মনোহরদীতে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ সভাপতির

  প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২৪ , ৫:৫০:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

মনোহরদীতে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ সভাপতির

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে এবং ব্যবসার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ঐ ব্যক্তির নাম ইউসুফ হাসান। তিনি মনোহরদী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি এবং গোতাশিয়া ইউনিয়নের দূর্বাকান্দী গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে। সে ছোট থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী।

ইউসুফ হাসান নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার নামে এবং ব্যবসার কথা বলে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণার অভিযোগে নরসিংদীসহ বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

মনোহরদী প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মালামাল উদ্ধারের জন্য মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালে চুলা গ্রামের তোতা মিয়া, খোকা মিয়া ও তাদের তিন বোন মনোহরদী প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স এবং প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার নামে ১১৩ শতাংশ জমি দান করেন।

পরবর্তীতে দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ইউসুফ হাসান। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে চাকরির দেওয়ার নামে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেন। এমনকি অন্যান্য জেলায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার কথা বলেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ব্যবসার কথা বলে এবং ধার হিসেবে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। টাকা ফেরত চাইলে মামলা-হামলার ভয় দেখানো হয় পাওনাদারদের।

তাছাড়া বিদ্যালয়ের এক আয়ার সঙ্গে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকায় এলাকার লোকজন তাকে আটক করে। পরবর্তীতে ওই নারীকে নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছাড়া। বিদ্যালয়ের জমিদাতা তোতা মিয়া বলেন, ইউসুফ একজন প্রতারক এবং চরিত্রহীন। আমার নিকটাত্মীয় কয়েকজনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দিবে বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে।

প্রায়ই ভুক্তভোগীরা আমাদের কাছে এসে বিচার দাবি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, ইউসুফ হাসান কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের নামে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই-তিন লাখ টাকা করে নিয়েছেন। পরবর্তীতে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত নিতে প্রায়ই তাদেরকে এলাকায় আসতে দেখা গেছে। চুলা গ্রামের আব্দুল কাইয়ূম বলেন, আমাকে মনোহরদী প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্সে শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে ইউসুফ। তিন বছর আগে টাকা নিলেও চাকরি হয়নি।

এমনকি আমার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। মনোহরদী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সদস্য মার্জিয়া বলেন, চার বছর আগে একমাসের কথা বলে আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছে ধার নিয়েছে ইউসুফ। দেই দিচ্ছি বলে এখনো টাকা পাইনি। প্রায় এক বছর ধরে সে উধাও হয়ে গেছে। আরেক সদস্য ফখরুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়েকে চাকরি দিবে বলে দুই লাখ টাকা নিয়েছে ইউসুফ হাসান। চাকরিও হয়নি আমার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না সে। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার আব্দুর রহমান বলেন, আমি কুমিল্লা প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্সের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

আমাদের বিদ্যালয়ের সভাপতি লোকমান হোসেন ভূঞার সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় প্রায়ই আমাদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতেন ইউসুফ হাসান। এ সুবাদে আমার সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০২২ সালে তার বিদ্যালয় সরকারিকরণের জন্য জরুরি টাকা দরকার বলে আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা ধার চায়। আমি বিভিন্ন তারিখে তাকে চার লাখ টাকা দেই। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো টাকা দেয়নি। এ ঘটনায় মনোহরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইউসুফ বাল্যকাল থেকেই অনেকটা প্রতারক চরিত্রের লোক। সে বিভিন্ন সময় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে অনেক প্রতিবেশীর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ধর্মীয় লেবাস দেখে অনেকেই খুব সহজে তার প্রতারণায় পা ফেলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।মনোহরদী প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্সের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসাইন বলেন, ইউসুফ হাসান প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স এবং প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার কয়েক মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মচারী ও জমিদাতাগণের দাবির প্রেক্ষিতে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরাবরে দুটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ইউসুফ হাসান বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত ১ টি মোটরসাইকেল, ৩ টি ৪৫ ইঞ্চি টেলিভিশন, ২ টি ফ্রিজ সহ মূল্যবান সরঞ্জামাদি সংরক্ষণের অজুহাতে চার বছর আগে বাড়িতে নিয়ে যান। পরবর্তীতে আর ফেরত দেননি। তাছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ধার হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন। সেগুলোও ফেরত দেননি। এ বিষয়ে ইউসুফ হাসান বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কারও টাকা আত্মসাৎ করিনি।

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাছিবা খান বলেন, ইউসুফ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনোহরদী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by