শীর্ষে থাকা অবস্থায় এক যুগ আগে মৃত্যুবরণ করে ঢাকাই সিনেমার ব্যবসাসফল চিত্রনায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্না। মৃত্যুর পর তার মরদেহ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার বাগানবাড়ির নিজ পারিবারিক কবরস্থানে  সমাহিত করা হয়। পারিবারিক কবরস্থানে  সমাহিত করা হলেও তার কবর পাকাকরণ এখনো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে ভক্তরা বিভিন্ন সময় কবর পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু পারিবারিক কবরস্থান নিচু জায়গায় হওয়ায় কবর সংস্কার করা  সম্ভব হয়নি। এরপরেও দুই দফা কবরস্থান মাটি দিয়ে উঁচু করলেও  পরে আবার ডেবে যাওয়ার কারণে সংস্কার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মান্নার পরিবার।

কবর সংস্কারের বিষয়ে চিত্রনায়ক মান্নার বড় বোন মিসেস কণা বলেন, ‘পারিবারিক কবরস্থানে আমার ছোট ভাইকে সমাহিত করার কারণে আমরা শুধুমাত্র তার কবরটা সংস্কার করতে পারিনি। কারণ যে জায়গাটায় তাকে কবর দেয়া হয়েছে সেই জায়গাটা ইসমাইলি। যেকারণে আমাদের একা সিদ্ধান্তে আমরা কবরটি সংস্কার করতে পারছি না। আমাদের পারিবারিক কবরস্থানের দেখভাল করেন আমার চাচা সাফি তালুকদার। তিনি দেশের বাইরে থাকেন। তার দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে দেশে আসতে পারছেন না। তিনি দেশে ফিরলেই কবর নির্ধারণ করেই প্রতিটি কবরের ফলক নির্মাণ করা হবে। তখনই আমরা মান্নার কবরটি সংস্কার করব।’

তিনি আরো বলেন, আমরা মান্নার কবরটি একবার পাকা করেছিলাম। তখন একসাথে সেখানে সবার কবর দেবে গিয়েছিল। এরপর আমরা মাটি ভরাট করি। তখন আমার চাচা দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি নিষেধ করেছিলেন দেশে ফিরেই সবাই মিলে সেখানে যতগুলো কবর আছে সবগুলোই পাকাকরণ করবেন। তার নিষেধের কারণে এখনো কবর পাকাকরণ করা হয়নি। কারণ তিনি জানেন কোথায় কার কবর আছে।

অন্যদিকে গেল ১৭ ফেব্রুয়ারি চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুবার্ষিকীতে কবর জিয়ারত ও মিলাদ মাহফিলের জন্য টাঙ্গাইল গিয়েছিলেন তার সহধর্মীনি শেলী মান্না। সেখানে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি কবর জিয়ারত ও এতিমখানা ও মাদ্রাসায় খাবার পরিবেশন করেছেন। সেখানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল শেষে কবর পাকাকরণের বিষয়ে মান্নার আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি।

চিত্রনায়ক মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না বলেন, কবরটি অনেক আগেই সংস্কার হতো। মান্নার মৃত্যুর পরেই কবর সংস্কারের জন্য উত্তম গুহের মাধ্যমে নকশা করে নেয়া হয়। কিন্তু ইসমাইলি জায়গা ও সাফি চাচা জাপানে থাকার কারণে  আমি আমার স্বামীর কবরটি সংস্কার করতে পারিনি। তবে মান্নার বড় বোন কণা আপার সাথে কথা বলে কবরটি দ্রুত সংস্কার সংস্কারের বিষয়ে কথা বলি।

হওয়ায় এককভাবে তাদের অনুমতি না পাওয়ায় এখনো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।’

১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতির কৈতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ঢাকাই সিনেমার দাপটে অভিনেতা এসএম আসলাম তালুকদার মান্না। ১৯৮৪ সালে ঢাকা কলেজে পড়াকালীন নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতার দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে চিত্রনায়ক মান্নার। মান্না অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল ‘তওবা’। নিজের চেষ্টা, পরিশ্রমে একসময় মান্না বাংলা সিনেমায় হয়ে উঠেছিলেন এক নম্বর নায়ক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন।

১৯৯৭ সালে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান মান্না। কৃতাঞ্জলি চলচ্চিত্র নামে তার ছিলো চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৮টি সুপার-ডুপারহিট সিনেমা উপহার দেন। নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম প্রযোজিত সিনেমার নাম লুটতরাজ।

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নায়ক আসলাম তালুকদার মান্না।