প্রতিনিধি ৬ জানুয়ারি ২০২২ , ৮:২৬:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী ব্যুরো: শীতের আভাস ইতোমধ্যেই গায়ে টের পেতে শুরু করেছে। দিন শেষে সন্ধ্যা নামতেই কমছে তাপমাত্রা। জেঁকে বসেছে শীত। শীত মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানা প্রস্তুতি। বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের কাপড়।
জমজমাট হয়ে উঠেছে মহানগরীর বিভিন্ন শীতবস্ত্রের বাজার। মহানগরীর নিউমার্কেট, সাহেববাজার, গনকপাড়া, হকাস মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার বিপণিবিতানগুলোতে শীতের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন শত শত ক্রেতা। পুরো শহরের বিভিন্ন জায়গার দোকানগুলো পসরা সাজিয়ে বসেছে শীতবস্ত্রের। পাশাপাশি গরম কাপড় কেনাকাটায় জমে উঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলো। এছাড়া ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করতে দেখা মিলছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়।
ভ্যানের ক্রেতারা তাদের সাধ্যমতো কম মূল্যের শীতবস্ত্র কিনতে শুরু করেছে। তবে বেশিরভাগ নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের ভিড় বাড়ছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশু, নারী, পুরুষসহ সব বয়সের মানুষের শীতের পোশাক রয়েছে এসব দোকানগুলোতে।
কোর্ট, জ্যাকেট, লংকোর্ট, উলের কোর্ট, শর্টকোর্ট, শর্ট জ্যাকেটসহ সব ধরনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের জামা-কাপড় কিনছেন। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেগুলোতে বেশি জমে উঠেছে ফুটপাতগুলো। জমে উঠেছে শীতের গরম কাপড়ের কেনাবেচা। এখানে পছন্দ মতো কম দামে ভালো দেশি-বিদেশি গরম কাপড় পাওয়া যায়।
এদিকে, মার্কেটগুলোতে মূলত সব বয়সী মানুষের জন্য সোয়েটার, মাফলার, হাত ও পা মোজা, মাথার টুপি, কানের ব্যান্ড জ্যাকেট, কোট, কম্বলসহ সকল প্রকারের গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের পছন্দ মতো কাপড় কেনার জন্য শীত মৌসুমে শত শত মানুষ এখানে গরম কাপড় কেনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। গরম কাপড় কেনার জন্য সমাজের সকল প্রকারের মানুষ প্রতিদিন ভিড় করেন। তবে বিগত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে করোনাসহ শীত দেরিতে আসার কারণে এবছর কেনাকাটা তেমন ভালো হবেনা বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, শীতের কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, করোনাসহ নানা জটিলতার কারণে কাপড়-চোপড়ের দাম বেশি। এছাড়া কাপড়ের ঘাটতি হওয়ায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বেচা-কেনা করতে হচ্ছে একটু বেশি দামে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি বেল্টে তথা কার্টুনে তাদের গুনতে হচ্ছে ডাবল টাকা। অতিরিক্ত টাকা দেয়ার পরও তাদের কিনতে হচ্ছে নিম্নমানের বেল্ট। যা বিক্রি করে মূলধন আর যাতায়াতের খরচই উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তারপরও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন অল্প টাকায় শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করছেন বাজারে।
মহানগরীর গণকপাড়া এলাকার রোদেলা ফ্যাশনের মালিক আল আমিন বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের ব্যবসা ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এখন কাপড় নিয়ে আসতে খরচ বেশি লাগছে। তাই এবার সব ধরণের কাপড়ের একটু দাম বাড়িয়ে আমাদের বিক্রি করতে হবে। রাজশাহী শহর চলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে। পরিক্ষা শেষ হওয়ার কারণে বেশিরভাগ বাড়িতে চলে গেছে। তাই আগের মত বেচা-কেনা নেই। খুব খারাপ অবস্থা চলছে বলে জানান তিনি।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শীতের কাপড়ের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু না হলেও প্রতিদিন কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক শিশুদের কাপড় বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে সোয়েটার, মাফলার, হাত-পা মোজা, মাথার টুপি, ফুলহাতা গেঞ্জি, কম্বলের দোকানের ভিড় চোখে পড়ার মতো। আগামী ৫-১০ দিন পর থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে জানান তারা।
গতবছর ফুটপাত থেকে একটি সোয়েটার ১০০-১৫০ পাওয়া যেত টাকায়। একই মানের সোয়েটার এবার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আমরা যে মাল বিক্রি করি তা শো-রুম বা দোকানের চেয়ে তুলনামূলক খুব একটা খারাপ না। বেছে নিতে পারলে ভালো মাল পাওয়া যায়।
আজিজুল হক নামের ফুটপাতের দোকানদাররা বলেন, গত শীতে যে মূল্যে মানুষ গরম কাপড় কিনেছে তা এবার পাবে না। কারণ, গতবারের এক বেল্ট গরম কাপড়ের দাম ছিলো ১২ হাজার টাকা। এবার সেই বেল্ট ১৬ হাজার টাকা নিচ্ছে। অর্থাৎ বেল্ট প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা মূল্য বেশি ধরছে পাইকাররা।
তিনি বলেন, এখন বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে মুকামে দাম বেশির কারণে আমরাও ক্রেতাদের নিকট দাম একটু বেশি ধরছি। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে গরম কাপড়ের মূল্য বাড়বে বলে তার ধারণা। প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন আজিজুলের মত ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।