দেশজুড়ে

রাজশাহীর ফুটপাতে নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটা

  প্রতিনিধি ১০ মে ২০২১ , ৭:২৫:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

রফিকুল হাসান ফিরোজ, রাজশাহী:

ঈদের কয়েকদিন বাকি। তাই শেষ সময়ে কেনাকাটায় জমে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহীর মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো। সকালের দিকে ফাঁকা থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ক্রেতার ভিড়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করছেন তারা। সরেজমিন মহানগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানের সামনে তীব্র যানজট দেখা যায়। মার্কেটগুলোর আশপাশে থেমে থেমে মানবজটলাও তৈরি হয়। সকালে মার্কেটে তেমন লোকজন না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়া মাত্রই মহানগরীর আরডিএ মার্কেটে তিলধারণের জায়গা ছিল না। সামাজিক দূরত্ব না থাকলেও বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যায়। একই অবস্থা মহানগরীর রাণীবাজার ও নিউমাকের্ট এলাকার দোকানগুলোতেও। ক্রেতাদের চাপ যেমন, বেচাবিক্রিও ভালো হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

ঝুঁকি নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্রেতারা বলেন, প্রতিটি দোকানে ভিড়, যে কারণে কারও পক্ষেই স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। ঈদে নিজেদের জন্য না হলেও বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েও বাজারে এসেছি।

দোকান মালিকরা বলেন, আমরা যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। তবে ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে অনুরোধ করলেও তারা শুনছেন না। বলতে গেলে বরং বিপরিত ফল হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত মার্কেট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা। সে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ভাঙলে জরিমানার সঙ্গে প্রয়োজনে জেল দিলেও স্বাগত জানাবেন তারা।
রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মামুদ হাসান বলেন, ‘মার্কেট চালুর জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়েছিলাম। পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। আশা করছি, চাঁদরাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মানার এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং মানুষ স্বস্তিতে ঈদের কেনাকাটা করতে পারবে।’

এদিকে ঈদের কেনাকাটায় বরাবরের মতই পিছিয়ে রয়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। তাদের কেনাকাটা চলবে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই মহানগরীর ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

পরিবার ও প্রিয়জনের ঈদ আনন্দ পরিপূর্ণ করতে অল্প বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

মহানগরীর সাহেববাজার আরডিএ মার্কেট, গণকপাড়া হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেট, থিম ওমর প্লাজা, এসএস টাওয়ার, সাহেববাজার কাপড়পট্টি, উপ-শহর নিউ মার্কেট, লক্ষীপুর, বিনোদপুরের বিভিন্ন মার্কেটের পাশের ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমেছে।

বরাবরের মতো এবার ফুটপাতের দোকানগুলোতে রয়েছে বাহারী পোষাক। তবে লকডাউনের কারণে বাজারে তুলনামূলক নতুন ডিজাইনের কাপড় কম।

নিম্নবিত্তদের কাছে নতুন পোষাকই বড় কথা। ফুটপাতের অস্থায়ী এ দোকানগুলোতে রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, লুঙ্গী, সালোয়ার কামিজ, ওড়না, শাড়ী, গামছা, বিভিন্ন ফ্রগ ইত্যাদি।

সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে এ পোষাকগুলো। সাহেববাজার ফুটপাতের এক দোকানে পোষাক কেনেন আব্দুর রহিম।
তার ঈদ কেনাকাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য পাঞ্জাবি, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজ; আর বউয়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি। আমি একটা লুঙ্গি নিয়েছি। এই আমাদের ঈদ কেনাকাটা। লকডাউনের মধ্যে ছিলোনা কোনো রোজগার।

তবুও বাচ্ছারদের নতুন কিছু না কিনে দিলে তো চলবেনা তাই রাস্তার পাশের দোকান গুলো থেকে অল্প দামের মধ্যে ঈদের মার্কেট করছি। নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেরই ঈদ কেনাকাটা এখনো হয়নি।
তবে আশায় রয়েছেন অন্তত ঈদের আগের দিন হলেও কেনাকাটা করবেন পরিবারের মানুষদের জন্য। তেমনই একজন রিক্সাচালক মোতালেব। তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা এখনো করতে পারিনি। ছেলে-মেয়ের জন্য পোষাক কিনতে হবে। বউকে গত ঈদে নতুন শাড়ি দিতে পারিনি। এবছর ওকে একটা নতুন শাড়ি দিতে হবে। ঈদের আগের রাতে কিনে ফেলব ইনশাল্লাহ।

নিজের জন্য কি কিনবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আদৌ কিছু কিনতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন মোতালেব। এদিকে ভাল কেনাকাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফুটপাত ও ছোট-খাট দোকান মালিকরা। বিক্রেতা পিন্টু জানান, প্রথম দিকে লকডাউন থাকায় বেচাকেনা করতে পারিনি। পনের রোজার পরে শুরু হয়েছে বেচাবিক্রি। শেষ দিকে এসে কেনাকাটা একটু ভালো হচ্ছে। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা। অল্প আয়ের মানুষেরাই এখান থেকে পোষাক কিনছেন বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by