দেশজুড়ে

সীতাকুণ্ডে সুলতানী আমলে নির্মিত ‘গায়েবি’ মসজিদ

  প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২১ , ৮:২৫:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

কামরুল ইসলাম দুলু, চট্টগ্রাম:

হাম্মাদিয়ার মসজিদ সুলতানী আমলে নির্মিত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার  সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটাকে চট্টগ্রাম জেলার এখনও বর্তমান মসজিদগুলোর মাঝে দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বাংলার শেষ হোসেন শাহী বংশের সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-১৫৩৮) সময় তৎকালীন চাটিগ্রাম বা চাটগাঁও বন্দর শহরের ১২-১৩ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ৭নং কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদিয়া গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদ স্থাপনের পর গ্রামের নামকরণ হয় মসজিদিয়া, স্থানীয়ভাবে উচ্চারিত বিকৃত নাম মসজিদ্দা।
এর অনতিদূরে (আধমাইল পূর্বে) চট্টগ্রামের পর্বতশ্রেণী ও রেলপথ, প্রায় একই দূরত্বে পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর। মসজিদের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মসজিদটি ১০.৩৭ একর বিশিষ্ট একটি দীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত, পাশে গড়ে উঠেছে একটি কবরস্থান। দীঘিটি হাম্মাদিয়া দীঘি নামে সুপরিচিত।
‘মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বর্গাকার ইমারত (বাইরের দিকে এর প্রতি বাহু ৬.৩৪ মিটার) এবং এর বাইরের চার কোণায় আছে চারটি সংযুক্ত চোঙ্গাকৃতির গোলাকার বুরুজ। রয়েছে মেহরাবের বাইরের দিকে একটি গোলাকৃতির বৃহৎমিনার ও এর উপরে স্থাপিত ক্ষুদ্রাকৃতির বুরুজ। চতুর্পাশের মিনারগুলোর ব্যাস সমান হলেও মেহরাবের বাইরের মিনারটির ব্যাস বেশি।
মসজিদের দেয়াল পৌনে ৪ হাত পুরু এবং তা পলেস্তার (আগে নিশ্চয়ই তা ছিল না) ও চুনকাম করা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গোলািপ রঙের এক গম্বুজের হাম্মাদিয়া জামে মসজিদ। এলাকার লোকজনের কাছে ‘গায়েবি’ মসজিদ নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম নগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামে এর অবস্থান। প্রায় পাঁচ শ বছরের পুরোনো এ মসজিদ ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন স্থাপনা। মূল মসজিদ ভবনের সঙ্গে বেমানান মনে হচ্ছিল।
গম্বুজের গায়ের গোলািপ প্রলেপটিও নতুন করে লাগানো বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, কবে এবং কারা এ মসজিদ তৈরি করেছিল তা সাধারণ মানুষের জানা নেই বলে একে ‘গায়েবি’ বা ‘অদৃশ্য’ মসজিদ বলে চেনেন। মূল মসজিদের ভেতরে প্রায় ৬০ জন মুসল্লি নামাজ পড়ার সুযোগ পেতেন। এখন পাশের অস্থায়ী মসজিদটিতে এক হাজার ২০০ জনের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা আছে। মসজিদ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের গর্ব।
প্রাচীন এ মসজিদ সংরক্ষণ হোক আমরা তা চাই।’ মহল্লাবাসীর সহযোগিতায় তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মিত ভবনে মহিলাসহ প্রায় তিন হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে চারতলা ভবনে থাকবে হেফজখানা ও এতিমখানা। মসজিদের পাশে একতলা ভবনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
মসজিদের পেছনে প্রায় ১০ একর জায়গায় রয়েছে হাম্মাদিয়া দিঘি । মসজিদের পাশে টিনের ছাউনির একতলা অস্থায়ী মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে। হাম্মাদিয়া মসজিদের ভেতরের ইট-সুরকির কারুকাজ থাকলেও এর চারপাশের জানালাগুলো ঢাকা পড়েছে নতুন ভবনের দেয়ালের আস্তরণে।
মেঝেতে মোজাইক করা হয়েছে এবং কমে গেছে মেঝের গভীরতা। ১৯৮৬ সাল থেকে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী আবদুস শুকুর বলেন, ‘মুসল্লিদের জায়গা সংকুলানের কথা ভেবে কার্যকরী কমিটির সভায় মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মূল মসজিদটিতে হাত দেব না।
এটি ভাঙা হবে না।’
তিনি ব্যক্তিগতভাবেও এটি সংরক্ষণের পক্ষে বলে দাবি করে বলেন, ‘মসজিদটি অক্ষত রাখার ব্যাপারে এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আবদুল করিমের মতে ‘হাটহাজারীর ফকিরের মসজিদ এবং কুমিরার হাম্মাদের মসজিদের স্থাপত্যরীতি একই, প্রভেদ এই যে, হাটহাজারী মসজিদ বড় এবং কুমিরার মসজিদ ছোট।
সুলতানী আমলে কুমিরা থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত একটি রাজপথ ছিল। এই দুইটি মসজিদ এই রাস্তার দুই প্রান্তে অবস্থিত ছিল। সুতরাং বলা যায় যে, কুমিরা মসজিদের নির্মাতা প্রকৌশলীরা হাটহাজারী মসজিদের স্থাপত্য শিল্পের দ্বারা প্রভাবিত হয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by