বরিশাল

স্বামী জীবিত, তবুও বিধবা ভাতা পাচ্ছে মা-মেয়ে

  প্রতিনিধি ১ মার্চ ২০২৩ , ১:১৪:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিয়াজ মাহমুদ জয়, ভোলা প্রতিনিধি:

মা-মেয়ে দু’জনের স্বামী জীবিত থাকার পরও নিয়মিত বিধবা ভাতার টাকা উত্তোলন করছে তাঁরা। প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এ টাকা উত্তোলন করে আসছেন ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কালিকীর্তি গ্রামের মো. দুলালের স্ত্রী বিবি সাহিদা (৪০) ও তাঁর মেয়ে বিবি মরিয়ম (২৪)।

তবে এ ঘটনা শুধু শিবপুর ইউনিয়নেই নয়। জেলার সদর উপজেলার ৩ নং পশ্চিম ইলিশা, ২ নং পূর্ব ইলিশা, বাপ্তা, ধনিয়া ও রাজাপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে রয়েছে এমন অনিয়ম।

চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রকৃত বিধবারা। তাঁরা বলছেন, এমন অনিয়মের কারণে প্রকৃত বিধবারা সরকারি এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে জেলা সমাজসেবা অফিস বলছে, এসব ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর সমাজসেবা অফিস খোঁজ নিয়ে এসব কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

স্বামী জীবিত থাকার পরও বিধবা ভাতার টাকা উত্তোলন করা বিবি সাহিদা বেগম জানান, ২০২০ সালের দিকে শিবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার মনজুর রহমান তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন। মনজুর তাকে জানায়, তাঁর মেয়ে বিবি মরিয়মকে ও তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিবে। তখন তিনি জানতে চান, ‘স্বামী জীবিত থাকার পরও বিধবা ভাতার কার্ড করা সম্ভব কিনা’?। এসময় মনজুর তাকে জানায়, ‘কার্ড প্রতি ৬ হাজার টাকা করে ১২ হাজার টাকা দিলে তিনি তা করিয়ে দিবে, ‘স্বামী মৃত্যুর সনদপত্র ম্যানেজ করার দায়িত্ব তাঁর’। এসময় তিনি তাদেরকে আরও জানায়, তাঁর ওয়ার্ডে এরকম বেশকিছু কার্ড তিনি করে দিয়েছেন। সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে এসব কার্ড তিনি করিয়ে দিতে পারবেন বলেও তাদেরকে আশ্বস্ত করে তার মেয়ে ও তাঁর কাছ থেকে ৬ হাজার করে ১২ হাজার টাকা নিয়ে দুইটি বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। এরপর থেকেই তাদের ফোন নাম্বারে নিয়মিত বিধবা ভাতার টাকা আসছে এবং তা তাঁরা উত্তোলন করছেন।

বিবি সাহিদার মেয়ে বিবি মরিয়মও একই কথা জানালেন।

সাহিদার স্বামী দুলাল জানান, মনজুর চৌকিদার টাকার বিনিময়ে সমাজসেবা অফিস ম্যানেজ করে তাঁর স্ত্রী ও তাঁর মেয়েকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। মনজুর চৌকিদার হওয়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে অসহায় দরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সরেজমিন শিবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিবি আয়েশা, ফুল জাহান বিবি ও মনেজা খাতুনসহ একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, মনজুর চৌকিদার হওয়ায় এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে সরকারি বিভিন্ন ভাতার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিচ্ছেন। যাঁরা পাওয়ার যোগ্য না, তাদেরকে লুকোচুরি করে তা পাইয়ে দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে।

শিবপুর ইউনিয়ন ছাড়াও সদর উপজেলার ৩ নং পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাতা গ্রাম, পাঙ্গাশিয়া গ্রাম, ২ নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সী গ্রাম, ইলিশা গ্রাম, বাপ্তা ইউনিয়নের চৌদ্দঘর স্কুল, ধনিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রাম, আলিনগর ইউনিয়নের চর ছিফলী গ্রাম ও রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে এমন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

টাকার বিনিময়ে মা-মেয়েকে বিধবা ভাতার কার্ড করিয়ে দেয়া অভিযুক্ত মনজুর চৌকিদার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তিনি ওই মা-মেয়েকে বেশ ভালোভাবেই চেনেন। কিন্তু তিনি টাকা নিয়ে অনিয়ম করে এ কার্ড করিয়ে দেননি।

শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিক কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

তবে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. কামাল হোসেন জানান, এমন অনিয়মের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। মনজুর চৌকিদার ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসের যোগসাজশে এই অনিয়ম করছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, খোঁজ নিয়ে এসব অনিয়মের বিষয় দেখা হবে।

জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, স্বামী মৃত এবং স্বামী নিগৃহীত এমন নারীদেরকেই বিধবা ভাতা দেয়া হয়। কিন্তু স্বামী জীবিত এবং সে স্বামী দ্বারা নিগৃহীত না এমন নারী বিধবা ভাতা পেয়ে থাকলে তদন্ত করে তাঁর বিধবা ভাতার কার্ড বাতিল করে দেয়া হবে।

অনিয়মের মাধ্যমে এসব কার্ড করার বিষয়ে তিনি বলেন, এসকল কার্ড ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেয়া হয়। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কেউ এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে সেটিও খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

Powered by