বাংলাদেশ

১৮ বছরে ২২ বার সুন্দরবনে আগুন, উদঘাটন হয় না রহস্য!

  প্রতিনিধি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৯:৪৪:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখছে বন বিভাগ। গত ১৮ বছরে বনের গহীনে বেশ কয়েকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও বন্ধ বা প্রতিরোধ করতে পারছে না বনবিভাগ। প্রতিবারই বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখলেও পুনরায় ঘটছে অপ্রীতিকর এমন ঘটনা।

তাই সবশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি বনে লাগা আগুনের ঘটনা দুর্বৃত্তদের নাশকতা সন্দেহ নিয়েই খতিয়ে দেখছে বনবিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি। এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ একই এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটে।

বিশ্বের দরবারে একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের নাম সবারই পরিচিত। এ সুন্দরবনের জন্যই বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের সমগ্র সংরক্ষিত বনভূমির অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৫১ শতাংশ বনই হচ্ছে সুন্দরবন। প্রায় ৬ হাজার ১১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বনপ্রাণি। নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, লবন পানির কুমির ও ২১০ প্রজাতির মাছ।

তবে সুন্দরবনে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয় তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও প্রতিবারই ধারণা করা হতো, বনজীবীদের অসাবধানতায় বিড়ি-সিগারেটের ফেলা দেওয়া অংশ থেকে আগুন লেগেছে।

কিন্তু এবারের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন না অনেকেই। সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবারের ঘটনা নাশকতাও হতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেসব এলাকার কিছু অসাধু জেলেরা মাছ ধরার জন্য তাদের সুবিধার জন্য জায়গা খালি করতে তারা আগুন লাগায়’।

‘এছাড়াও ইতোপুর্বে চাঁদপাই রেঞ্জে জেলে সেজে কিছু দুর্বৃত্ত সুন্দরবনের গহীনে বনের কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরী করেছিল, যা গত বছর বন বিভাগের হাতে ট্রলার বোঝাই ধরা পড়েছে। কিন্তু কারা এর সাথে জড়িত তা বনবিভাগের কাছে তথ্য ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ বলেন ফরিদুল ইসলাম।

তবে এ ঘটনার সঙ্গে বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহ প্রকাশ করে বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চরম উদাসীনতাকেই দায়ী করেন তিনি। বনবিভাগ কঠোর নজরদারি করলে এ ঘটনা বাববার ঘটতো না বলেও ক্ষোভ জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় কার্যালয়ের (বাগেরহাট) উচ্চমান সহকারী মো. হারিস এক তথ্যে (০৯ ফেব্রুয়ারি) জানান, সুন্দরবনে ২০০২ সালে কটকা এলাকায় একবার, নাংলী ও মান্দারবাড়িয়া এলাকায় দুই বার, ২০০৫ সালে পচাকোরালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল দুইবার, ২০০৬ সালে তেরাবেকায়, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকরালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার, ২০০৭ সালে পচাকোরালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়া এলাকায় তিনবার, ২০১০ সালে গুলশাখালী একবার, ২০১১ সালে নাংলিতে দুইবার, ২০১৪ সালে গুলশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলি, পচাকোরালিয়া ও তুলাতুলিতে তিনবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসা ছিলায় একবার এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারিু) চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়। এসব আগুনে কোটি কোটি টাকার বনজসম্পদ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে বলেও জানান বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয় থেকে।

এদিকে, নানা সময়ে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন এমন দুইজন বন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটি বনের অভ্যন্তরে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধকল্পে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের সুপারিশমালা পেশ করেছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বন-সংলগ্ন লোকালয়ের লোকজনের মাঝে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি, অগ্নিকাণ্ডের পর তা নিয়ন্ত্রণ বা নেভাতে বনবিভাগের লোকবল বৃদ্ধি, বনবিভাগের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ইউনিট গঠন, বন-সংলগ্ন ভরাট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী ও খাল খননের মাধ্যমে গভীরতা সৃষ্টি প্রভৃতি।

ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, সুপারিশের অধিকাংশই দীর্ঘদিনে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে বনাঞ্চলে বারবার আগুনের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া আগুন লাগার পর তা নেভাতেও বনকর্মীদের চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বলেন, চাঁদপাই রেঞ্জে অধিকাংশ আগুনের ঘটনা ঘটেছে নাংলি, ধানসাগর, ভোলা ও পচাঁকোরালিয়ার নদী-সংলগ্ন এলাকায়।

তিনি আরও বলেন, সবশেষ সোমবার আগুনের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটি কি কারণে বনের অভ্যন্তরে আগুন লেগেছে তার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেবেন। তার পরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বনে আগুন দিয়ে বনজ সম্পদ ধ্বংসকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by