রাজশাহী

নীলকরদের শোষণের সাক্ষী কুঠিবাড়ি এখন আখ বিক্রয় কেন্দ্র

  প্রতিনিধি ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ , ৫:২৪:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি :

কেউ বলে নীলকুঠির, কেউ বলে কুঠিবাড়ি। কয়েকশ বছর ধরে টিকে আছে এই বাড়িটি। ব্রিটিশ শাসনামলে এ দেশের কৃষকদের বাধ্য করা হতো নীল চাষ করতে। সেই নীল নিয়ে যাওয়া হতো ব্রিটেনে। সেই ব্রিটিশদের শাসন-শোষণের নানা স্মৃতি হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নওশেরা মহল্লায় অবস্থিত নীলকরদের কুঠিবাড়িটি । তবে সময়ের পরিবর্তনে সেটি এখন আখ বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগাতিপাড়ার জঙ্গলাকীর্ণ অসমতল জায়গা নিরীহ বাসিন্দাদের দ্বারা পরিষ্কার করে নীলচাষের উপযোগী করে সেই সময় তৎকালীন ইংরেজরা এ অঞ্চলে কুঠিবাড়ীটি স্থাপন করে। আর এসব অঞ্চলের চাষীদের জোরপ‚র্বক নীল চাষ করতে বাধ্য করেন তারা। কিন্তু কালের বিবর্তনে সে সময়ের স্থাপিত এই উপজেলার নীলকুঠিয়াল সাহেবদের অফিস-আদালত এবং নীল সংরক্ষণাগারসহ বহু স্থাপনা মাটির গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কিছু কিছু স্থানে এই নীল কুঠি ও কলকুঠিগুলোর কিছু অংশ কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারই অংশবিশেষ এই কুঠিবাড়িটি। আজও এসব এলাকায় রয়েছে নীলকর আদায়কারী সাহেবদের আনা সাঁওতাল-বাগদীসহ বিভিন্ন আদিবাসী শ্রমিক গোষ্ঠী। এসব নীলকর সাহেবরা এই এলাকায় জোরপ‚র্বক নীল চাষ করাত। ইংরেজদের কাছ থেকে ভারত ও প‚র্ববাংলা ভাগাভাগীতে রেনুইক অ্যান্ড কোং প‚র্ব বাংলা এবং ভারতের সব কুঠিগুলোর মধ্যে নওশেরা তথা প‚র্ববাংলার সব সম্পদ রফিক অ্যান্ড কোং’র নামে হয়ে যায়।স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রæতি আছে, রফিক অ্যান্ড কোং তার দখলদারিত্ব পাওয়ার পর নাটোর চিনিকল স্থাপনের পরমুহ‚র্তেই রেনুইক কোং’র পক্ষ থেকে রফিক অ্যান্ড কোং বাংলাদেশ সুগার কর্পোরেশনকে নওশেরা কলকুঠি ও কুঠিয়ালদের সব সম্পত্তি দিয়েছেন। তার পর থেকে সেখানে আখের মৌসুমে নাটোর সুগার মিলের আখ ক্রয় কেন্দ্র হিসাবে সেটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার কৃষকরা নাটোর চিনি কলের কাছে আখ বিক্রয়ের জন্য সেখানে আখ নিয়ে আসে। তারপর সেখানে পরিমাপ সহ অন্যান্য কার্যাবলী শেষে সেখান থেকে সেই আখ নিয়ে যাওয়া হয় নাটোর সুগার মিলে। কালের সাক্ষী হিসেবে পড়ে থাকা তথাকথিত ইংরেজ সাহেবদের সেই ডাকবাংলো এক সময়ের ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন অযতেœ অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা। সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঐতিহাসিক এই ডাকবাংলোটি সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা রেজাউন্নবী রেণু বলেন, নওশেরা গ্রামটিতে ম‚লত ব্রিটিশরা তাদের সুবিধার জন্য আদিবাসী, পাঠান এবং খানদের এনেছিল। এছাড়াও এখানে ইংরেজদের আনা শ্রমিক গোষ্ঠী বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মধ্যে বাগদী, সাঁওতালদের বংশধররা এ উপজেলায় বাস করে। সে সময় এখানকার চাষীদের দিয়ে জোরপ‚র্বক নীল চাষ করানো হতো। আর স্থাপনা গড়ে তুলেছিল নীলকুঠির, কুঠিবাড়ী, ডাকবাংলোসহ নানা স্থাপনা। এসব স্থাপনা ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by