প্রতিনিধি ২০ অক্টোবর ২০২০ , ৩:১০:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
ওবায়দুল ইসলাম, নীলফামারী :
করোনার বিধি নিষেধ মেনেই নীলফামারী জেলায় চলছে দুর্গাপূজার মহোৎসব। শারদোৎসব দরজায় কড়া নাড়ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীর সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপুজা।
ষষ্ঠীর মাধ্যমে আগামী ২১ অক্টোবর দুর্গা পূজোর উৎসব ঘিরে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান সনাতন পূজো উৎযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
নীলফামারী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাড. অক্ষয় কুমার রায় জানান, এ বছর নীলফামারী ৬ উপজেলা এবং ৪ পৌরসভা এলাকায় দুর্গাপূজা হচ্ছে ৮৪১টি মন্ডপে। তার মধ্যে নীলফামারী সদরে ২শ ৭৩, ডোমার উপজেলায় ৯৮, ডিমলা উপজেলায় ৭৫, জলঢাকা উপজেলায় ১শ ৭৫, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা ১শ ৪১ এবং সৈয়দপুর উপজেলায় ৭৯টি মন্ডপ রয়েছে। গত বছর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৮শ ৮০টি মন্ডপে।
এবার ৩৯টি মন্ডপে পূজা হচ্ছে না। করোনাকালিন এ সময় সরকারের বিধি নিষেধ মেনেই উৎসব পালন করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে পূজামন্ডপের জন্য সরকারীভাবে ৫শ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিমার রঙ তুলির কাজ শেষ হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে এবারে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনকালে কোনো শোভাযাত্রা থাকছে না।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, পূজো প্যান্ডেলের ভিতরে বা বাইরে মেলা, খাবারের স্টল, নাগরদোলা, প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে না। পূজোর জায়গা, সেখানে দূরত্ব বজায় রাখার সুযোগ-সুবিধা রাখতে হচ্ছে। ফেসকভার কিংবা মাস্ক পরে আসতেই হবে। রাখতে হবে স্যানিটাইজার, থার্মাল স্ক্রিনারও। কোথাও বেশি ভিড় বা বড় জমায়েত চলবে না। পূজোমন্ডবে প্রবেশ ও বাহির পথ পৃথক করা হয়েছে।
প্রতিমা কারিগর তারক নাথ বলেন, অন্য বছর বড় বড় প্রতিমা তৈরী করতাম। এবার করোনাকালিন প্রতিমার সাইজ ছোট করা হয়েছে। কাদা লাগানোর কাজ শেষ, রঙ তুলির কাজও শেষ। উন্নত রঙ লাগিয়ে আধুনিক মানের তৈরি করা হয়েছে এসব প্রতিমা। কিছু কিছু মন্ডপের রঙ তুলির কাজ এখনও চলছে। খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের সন্যাসী তলা গ্রামের মৃৃৎ শিল্পী রমানাথ চন্দ্র রায় বিকাশ চন্দ্র রায়, কৃৃষ্ণ চন্দ্র রায়সহ অনেকে প্রতিমায় রঙ তুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বৈঠকে সনাতন নেতাদের জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিধিনিষেধ কড়াকড়ি করা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ একাধিক বিষয়ে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত বলেন, গত বছর জেলায় ৮শ ৮০টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গা উৎসব হয়েছিল। এর অনুকূলে ৪শ ২২ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এবার ৮শ ৪১টি মন্ডবের বিপরীতে ৪২২.৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তুলনামূলকভাবে কারোনার পরিস্থিতির মধ্যে ৩৯টি মন্ডপ কমেছে।
সদর থানার ওসি (তদন্ত) মামুদ উন নবী বলেন, করোনা পরিস্থিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ২২ অক্টোবর থেকে প্রতিটি মন্ডপে ১জন করে পোশাকধারী পুলিশ ও ৫জন করে আনসার নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়াও গ্রাম পুলিশও সহযোগিতা করবে। যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে কঠোর নজরদারী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলেন, এবারে জেলায় ৮শ ৪১টি পূজা মন্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ১জন পোশাক ধারি পুলিশের সাথে ৫জন আনসার ও গ্রাম পুলিশ সহযোগিতা করবে। এছাড়াও বিজিবি ও র্যাব ২৪ ঘন্টা টহলে থাকবে। এ দিকে, জেলার ৬ উপজেলায় পূজা মন্ডপগুলো গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে। বেশি রাত পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন করতে পারবে না। এছাড়াও বিসর্জনে কেউ বক্স নিয়ে বের হতে পারবে না। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষেও বিশেষ তদারকি করা হবে।