বাংলাদেশ

আগামী ১০ ডিসেম্বর ‘খেলা’ হবে : ওবায়দুল কাদের

  প্রতিনিধি ৩ নভেম্বর ২০২২ , ৪:৫০:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

জাতীয় সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ‘খেলা’ বন্ধের দাবি তুললে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘খেলা’ চালু রাখার কথা বলেন। বিএনপির শাসনামলে জিরো উন্নতি এবং তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও খুনের বিরুদ্ধে ‘খেলা’ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে সংসদের চলতি অধিবেশনে হারুনুর রশীদকে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এসময় তিনি জন-অসন্তোষ ও জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনা করেন। সরকারের ‘খেলাকে’ জনদুর্ভোগের সঙ্গে তুলনা করে তিনি ‘খেলা’ বন্ধের দাবি করেন। জবাবে ওবায়দুল কাদের ‘খেলা’ অব্যাহত থাকবে বলে কড়া জবাব দেন।

হারুনুর রশীদ তার বক্তব্যে জনদুর্ভোগ থেকে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, দেশ এখন জনদুর্ভোগের দেশে পরিণত হয়েছে। এই জন-অসন্তোষ লাঘবে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না।

বিমানবন্দর সড়কে যানজটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যানজটের কারণে গত ২৬ অক্টোবর সকালে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নেমে বিমানবন্দর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। বিমানের নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা পরে পৌঁছাই। পথে দেখি শত শত বিমানযাত্রী বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর সরকারকে গালিগালাজ করছে। এটা একদিনের সমস্যা নয়। ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে বিএনপির এমপি আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের জন্য যথাযথ ট্রাফিকিং ব্যবস্থাসহ আলাদা প্যাসেজ তৈরির দাবি করেন। তিনি বিমানবন্দরে তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেন।

সড়ক পরিবহনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যোগাযোগমন্ত্রী প্রায়ই বলছেন ‘খেলা’ হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ‘খেলা’ হবে। আমরা এমন খেলা দেখতে চাচ্ছি না যে জনদুর্ভোগে মানুষ পড়েন। এ দেশে দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ- এগুলো নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে সভাসমাবেশ করছি। আপনি কেন পরিবহন বন্ধ করছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে বলেন, কী কারণে পরিবহন বন্ধ হয়েছে বলতে পারবো না। দেশ চালাচ্ছেন কেন আপনারা? একটা নয়, দুটো নয়, একের পর এক, উপর্যুপরি। আগামী ৫ তারিখে বরিশাল সমাবেশ হবে। লঞ্চ বন্ধ, বাস বন্ধ, থ্রি-হুইলার বন্ধ। ট্রেন বন্ধ। সবকিছু বন্ধ। এর ফলশ্রুতিতে যে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে তা কল্পনা করা যায় না। যোগাযোগমন্ত্রী আছেন, দয়া করে দুর্ভোগ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। জনদুর্ভোগ আর বাড়িয়েন না। জনদুর্ভোগে যে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে তাতে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। মনে করি সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

হারুন বলেন, সরকারকে বলবো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরে আসুন। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলকে যে সভাসমাবেশ করতে দেন না, সেই জায়গায় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। আমি মনে করি ‘খেলা’ বন্ধ করুন। ‘খেলা’ বন্ধ করে সত্যিকার অর্থে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

পরে সংসদে ফ্লোর নিয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দল হলেই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা কালচারে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরের যে প্রকল্প—পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, মেট্রোরেল সামনে হচ্ছে। এলিভেটেড এগিয়ে গেছে। কর্ণফুলী টানেল রেডি। কী চান আর? একটা সরকার এতগুলো প্রজেক্ট। যেদিকে তাকান ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ওভারপাস। আপনাদের সময় কী ছিল? জিরো। ওই জিরোর বিরুদ্ধে ‘খেলা’ হবে। ওই জিরো যে করছেন! ভোগান্তিতে রাখছেন লাখো-কোটি মানুষকে। সেটিই ‘খেলা’ হবে।

ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরে পানির লাইন খুবই খারাপ। আমি নিজেও ভোগান্তি বলেছি। গলার কাঁটাও বলেছি। স্বীকার করেছি। এসব স্বীকার করার কালচার আপনাদের মধ্যে নেই। প্রকাশ্যে বলেছি প্রকল্পটা ডিজাইনে একটু ত্রুটি ছিল। সে কারণে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু আজকে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক, ওই রাস্তা এখন স্বাভাবিক। ৬ তারিখে ইনকামিংটা খুলে দেবো। না জেনে কথা বলবেন না। এত কাজ সরকার করছে- একটাতে ভুলত্রুটি হতে পারে। আমরা তো স্বীকার করেছি। অস্বীকার করিনি।

বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে হারুনের অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাস ধর্মঘট কেন হয়েছে শিমুল বিশ্বাসকে (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) জিজ্ঞেস করুন। কেন মন্ত্রী বলবে? সে পরিবহনের নেতা। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেক্রেটারি বাসদ। প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগ (শাজাহান খান)। আর মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট রাঙা, জাতীয় পার্টি। সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ- এনায়েত। ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের শিমুল বিশ্বাস। সে কোন দলের? সে একটা স্টেটমেন্ট দেয় না কেন? সে কি বিএনপি? না কি অন্য কোনো দল? আপনাদের দলের নেতা। তাকে জিজ্ঞেস করেন। হাসেন কেন? আগুনে বাস পোড়াইছে তো? আগুনে বাস পোড়ালে ভালো লাগে। বাসওয়ালারা এখন আর বিশ্বাস করে না। এরা বিএনপিকে দেখলেই মনে করে আগুন নিয়ে আসছে। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে পেট্রলবোমা। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে ককটেল। এখন আবার পতাকা! লাঠিসোটার সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

‘খেলা’ অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খেলা’ হবে। এর বিরুদ্ধেই ‘খেলা’ হবে। ‘খেলা’ হবে। আমি বলছি ‘খেলা’ হবে খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। ‘খেলা’ হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ‘খেলা’ হবে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ‘খেলা’ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ‘খেলা’ হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে। খারাপ কী বলেছি?

আরও খবর

Sponsered content

Powered by