রাজশাহী

আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথাগোজার ঠাঁই পেয়ে উচ্ছ্বসিত গৃহহীণরা

  প্রতিনিধি ২৬ এপ্রিল ২০২২ , ৬:৫৩:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

এস, এম আল আমিন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

নদী ভাঙনে নিয়ে গেছে সব। ভাসমান জীবন। নেই ভিটে মাটি, মাথাগোজার ঠাঁই। অন্যের বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে নিম্ন আয়ের মানুষদের সংগ্রামী জীবনযাপন চরম কষ্টের। এ কষ্টের অবসান হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প তাদের সুখের হাতছানি দিয়েছে। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প বদলে দিয়েছে ঘরহীন মানুষের জীবন। আগে যাদের ‘নুন আনতে পান্তা’ ফুরোনোর চিন্তায় অস্থির থাকতো, মাথা গোঁজার চিন্তা করতো তারা আজ সাবলম্বী।

যাদের ছয় মাস আগেও নিজের কোনো আশ্রয় ছিল না। অন্যের বাড়িতে কিংবা পথে-ঘাটে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে জীবন বদলে গেছে তাদের। এখন তাদের চোখে মুখে স্বপ্ন! সংসারে স্বচ্ছলতা আনার, আগামীর জন্য এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় তারা। তারা জানান, ‘আগের দিনের কষ্টের কথা মনে পড়লে কান্না চলে আসে। আগে থাকতাম একজনের বারান্দায়, এখন থাকি পাঁকা ঘরে। আরো জানান, ‘এখানে আসার পর নতুন জীবন পেয়ছি, ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছি।’ তাদের স্বস্তি এসেছে জীবনে, হাসি ফুটেছে মুখে। গত সোমবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকসাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন স্বস্তি ও সুখের গল্প উঠে এসেছে। এখানে তৃতীয় ধাপে ৪৪টি পরিবারকে ২ শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এগুলো আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করেন। ঘর পাওয়া একজন গোলাম হোসেন (৭৮)বলেন, এই বয়সেও রিক্সা চালিয়ে দিনপাত করা লাগে যে কামাই (আয়) হতো সেটা দিয়ে সংসার চালানো ছিল খুব কষ্টের। সেই সাথে ছিল অন্যের বাড়িতে থাকার ভাড়া।

কিন্ত প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে জীবনের কালো ছায়া নেমে গেছে। এখন আর ভাড়া দেওয়া লাগেনা। বাকি জীবন আর ভাড়া বাসায় থাকতে হবেনা, আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। বলে জানালেন তিনি। ঘর পাওয়াদের একজন সামিয়া বেগম। ষাটোর্ধ এ নারীর বাড়ি খরিষাগুরা। ভাড়ায় থাকতেন। স্বামীর বাড়ি ছিল, নদী ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। স্বামীও অনেক অনেক আগেই মারা গেছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘকাল সংগ্রাম করে চলেছেন তিনি। ছেলের রিকশা চালানোর আয় দিয়ে চলেছে সংসার। কিন্তু ঘর বাড়ি করার টাকা পাবে কই? তিনি বলেন, ‘ঘরবাড়ি করা তো আমাদের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি ও ঘর দেওয়ায় খুশি হইছি। তার জন্য দোয়া করমু। সে যেন দুনিয়ার ওপর শান্তি পায়, পরকালেও শান্তি পায়। আমরা অসহায়, আমাদের স্থান দিছে। পরকালে আল­াহও তাকে স্থান দিবো।’ ঘর পাওয়া আরেকজন স্বামী পরিত্যক্তা মাজেদা। ধানগড়া ভাড়া থাকেন। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। বাপের বাড়ি খোকশা বাড়ি। স্বামীর বাড়ি শালোয়া ভিটা। তারও কিছু ছিল না। ১ ছেলে ৩য় শ্রেণীতে পড়ে। ১ মেয়ে, বিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আগে তো সবার লাত্থি খাইছি, থাকার যায়গা পাই নাই। এখন একটু থাকার যায়গা পাইছি। এটাই ভালো লাগছে। আমি খুশি আছি।”তাদেরই একজন শরীফা। থাকতেন খোকসাবাড়ি গ্রামে বাপের বাড়িতে। ১ ছেলে, ২ মেয়ে। বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে, আরেকজন প্রথম শ্রেনীতে। ছেলের বয়স চার। তার স্বামী নাজমুল রিকশাচালক। শিমলা আফানিয়া নদী ভাঙ্গণে তার বাড়িও বিলিন হয়ে গেছে।তিনি বলেন, “আমরা ঘর পেয়ে খুশি। আল­াহর কাছে দোয়া করি, মান সম্মান সহ যাতে থাকতে পারি। এখানেই যেনো মরণ হয়।”পাশে দাঁড়ানো শরীফার স্বামী নাজমুল বলেন, ‘আমরা নদী ভাঙা মানুষ। ভাঙতে ভাঙতে এখানে আইছি। বাপ মা তো নাই, থাকি শ্বশুর বাড়ি। এখন একটা বাড়ি পাইছি, এটাই আনন্দের। আমাদের ভাসমান জীবনের আশ্রয় হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি বলেন, তৃতীয় ধাপে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯৩টি ঘর আমরা করছি, ৮২টি প্রস্তুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল এগুলো আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করেন।

এরমধ্যে খোকশা বাড়িতে ৪৪টি ঘর প্রস্তুত হয়েছে। খোকশাবাড়িতে মোট ২৬৬ পরিবারকে ঘর দিচ্ছি। এরআগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১০০ ও ১২২টি ঘর দেওয়া হয়েছে।সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় আমরা তৃতীয় ধাপে ৫৩৩টি ঘর নির্মাণ করছি। ইতিমধ্যে ৪০৯টি প্রস্তুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। তিনধাপে মিলে সিরাজগঞ্জে আমরা ১৮১০টি ঘর করেছি।

এখানে (খোকশাবাড়ি) ২৬৬ পরিবারকে এখানে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তিনি বলেন, শুধুমাত্র জমি আর সেমিপাকা ঘরই দেইনি, আমরা এখানে সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করেছি। সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের পাশাপাশি মসজিদ, খেলার মাঠ, বিশ্রামগার, পুকুর ও ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব সুবিধা আছে। তাতে সুবিধাভোগীদের জীবনমান পাল্টে গেছে।এর আগে, প্রথম ধাপে ১০০টি, দ্বিতীয় ধাপে ১২২টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। ১০ একর জায়গার মধ্য ৭ একর জায়গায় বানানো হয়েছে এই প্রকল্পটি। সামনে তিন একর জায়গার মধ্য হবে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ফায়ার স্টেশন।

 

 

Powered by