আন্তর্জাতিক

ইউরোপে যুদ্ধ ফেরালেন পুতিন: ইইউ প্রধান

  প্রতিনিধি ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৮:৪৮:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

ইউরোপে যুদ্ধ ফিরিয়ে আনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতা দুর্বল করার জন্য ‘ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা’র একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হবে।

তিনি বলেন, এই প্যাকেজে আমরা রাশিয়ার প্রধান প্রধান প্রযুক্তি এবং বাজারে প্রবেশ ঠেকানোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতির কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করব। আমরা রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেব।

এছাড়া আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার সম্পত্তি জব্দ এবং ইউরোপের আর্থিক বাজারে রুশ সব ব্যাংকের প্রবেশ বন্ধ করব। নিষেধাজ্ঞার প্রথম প্যাকেজের মতো আমরা অংশীদার এবং মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট। এসব নিষেধাজ্ঞা ক্রেমলিনের স্বার্থ এবং যুদ্ধে অর্থায়নের ক্ষমতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলার জন্য সাজানো হয়েছে।

 

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওডেসায় রুশ সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এক প্রতিবেদনে এ খবর নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্দরনগরী ওডেসার বাইরের পোডিলস্ক শহরে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটে রাশিয়ার বোমা হামলায় ৭ জন নিহত এবং আরও সাতজন আহত হয়েছেন।

এছাড়া বোমা হামলার পর থেকে পোডিলস্কে নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৯ জন। মারিউপোল শহরে বোমা হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনের পুলিশ জানিয়েছে।

ইউক্রেনে মাশার্ল ল জারি, বিজয়ের শপথ জেলেনস্কির

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের সামরিক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন জেলেনস্কি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের শপথ করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদমে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ওই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আর্টিলারি আক্রমণের কবলে পড়েছে ইউক্রেন। হামলার জবাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও গোলা ছুড়ছে।

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ-সমর্থিত পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের হাতে ইউক্রেনের সরকার নিয়ন্ত্রিত শচস্ত্য শহরের পতন হয়েছে। তীব্র উত্তেজনার মাঝে জেলেনস্কি ইউক্রেনজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।

জো বাইডেন ও জেলেনস্কির টেলিফোন আলোচনার পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আজ রাতে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং আমরা সবেমাত্র কথা বলা শেষ করেছি। আমি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিনা উসকানিতে অন্যায্য হামলার নিন্দা জানাই।

রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত ইউক্রেনের সামরিক সদর দপ্তরে রাশিয়ার হামলার পর শহরটি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন বহু মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রতিবেশী এই দেশটিতে হামলার ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানতে শুরু করে।

কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরের পাশাপাশি হামলা হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও। হামলার মুখে রাজধানী কিয়েভে জরুরি সাইরেন বাজায় কর্তৃপক্ষ। পরে আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বহু মানুষ। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে মহাসড়কে পলায়নরত মানুষের গাড়ির স্রোত ও জট দেখা যায়।

রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার এই আক্রমণের মুখে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক ফুটে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই সেখানে জানিয়েছেন, জীবনের নিরাপত্তার জন্য তারা নিরাপদ আশ্রয়ে, এমনকি বাড়ির বেজমেন্টেও অবস্থান নিয়েছেন।

টেলিভিশন ফুটেজেও মানুষকে দলবেঁধে রাস্তায় প্রার্থনা করতে দেখা যায়। এছাড়া কিয়েভ থেকে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, রাজধানীর রাস্তায় খুব কম মানুষের দেখা মিলছে এবং বহু মানুষ টাকা তোলার মেশিনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by