দেশজুড়ে

করোনায় ঈদবাজার ও আমাদের নৈতিকতা

  প্রতিনিধি ২৩ মে ২০২০ , ৫:৫২:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

পাখি ড্রেস কিনে না দেওয়ায় বাবার সাথে রাগ করে কন্যার আত্মহত্যা; ঈদে পছন্দের পোশাক না পেয়ে ছেলের আত্মহত্যা; দামী শাড়ি কিনে না দেওয়ায় স্বামীকে স্ত্রীর ডিভোর্স – এগুলো গেল কয়েক বছরে ঈদ শপিংয়ের অপূর্ণতায় ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর সত্য, যা পত্রিকার ভাষ্য। আমাদের আশপাশে এমনও দেখা যায় – পছন্দের কাপড় না পেয়ে ঈদ করছে না অনেকে। ঈদের নামাজেও দেখা নেই। এসব শুধু ছোটদের নয়, কিছু-কিছু ক্ষেত্রে অনেক বড়রাও এ কাতারের অংশীদার।

এসব দেখে মনে হয়, ঈদে যেন নূতন পোশাকটাই মূখ্য। নূতন কাপড়ই যেন ঈদ গল্পের নায়ক। পছন্দসই শাড়িটিই যেন এ গল্পের প্রধান চরিত্র। অপরদিকে এসব ঘটনা ঈদ গল্পের খলনায়ক বানিয়ে দেয় পরিবারের কর্তা, তথা পিতা কিংবা স্বামীকে। বাবা কেন কিনে দিলোনা সেই পোশাক, যা আমি চাই; স্বামী এতো কিপটে কেন – এসব ভেবে-ভেবে অসহায় কর্তাটাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা।

যে মানুষটি নিজের সর্বস্ব দিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সদাজাগ্রত। সে মানুষটাই আজ অপরাধী! এ ত গেল কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা। এর সাথে এখন যোগ হয়েছে নতুন অধ্যায়। সারা বিশ্ব এখন এক নিরব ঘাতকের আক্রমণে মুমূর্ষু। সরব পৃথিবী অজানা আতংকে নিরব-নিস্তব্ধ। দুনিয়ার চিরচেনা রূপ যেন আজ সম্পূর্ণই অচেনা। মসজিদের সেই জৌলুশ আজ নেই বললেই চলে। মকতবে শিশুদের মধুর আদুরে কন্ঠে আলিফ, বা, তা – শোনা হয়নি দীর্ঘদিন।

হেফযখানা থেকে ভেসে আসেনা পবিত্র কুরআনের পাখিদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুর – কুরআনের ধ্বনি। মাদরাসার টুল-টেবিলগুলো তালেবে ইলমের স্পর্শ পেতে কেঁদে চলছে অবিরাম। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে হাহাকার। ক্যাম্পাসের প্রাণ শিক্ষার্থী ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাণহীন। রাজপথে নেই দাবী আদায়ের সংগ্রামী আন্দোলন। নেই নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবর, নারায়ে রিসালাত-ইয়া রাসুলুল্লাহ (দ.) ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করা বিশ্বজয়ী শ্লোগান। খেলার মাঠে গোল গোল, কিংবা চার-ছক্কার আওয়াজ আটকে আছে বহুদিন।

অনেকে প্রার্থনাগৃহে শেষ কখন গিয়েছে তারিখটাও হয়তো মনে নেই। প্রবাসে ঘরবন্দী। মা-বাবাকে দেখতে চায় প্রবাসী সন্তান। বহুদিন পর প্রত্যাশিত পুত্র সন্তান দুনিয়াতে এলো। প্রবাসী বাবার ইচ্ছে – সন্তানকে বুকে নিয়ে স্নেহের পরশ দিবে। স্ত্রীরও প্রবল আকাঙ্ক্ষা আপনজনটাকে কাছে পেতে, কিন্তু উড়োজাহাজটি যে এখন আর উড়ে না। সে এখন ঠাই দাঁড়িয়ে। তার দাঁড়ানোতে দাঁড়িয়ে আছে অনেকের আশার আলোও। আজ বহুদিন হলো বন্ধুর সাথে কোলাকুলি করেছি। সন্তানটাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছি। এই তো কিছুদিন আগেও সালামের সাথে-সাথে হাতটাও বাড়িয়ে দিলাম বন্ধুর পানে।

হাত বাড়ানো প্রিয় নবী (দ.)-এর সুন্নাত বলে নবীপ্রেমিকরা এমনটা করত। মুসাফাহা করলে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে – শ্রেষ্ঠ শিক্ষক (দ.)-এর শিক্ষা এটা। কিন্তু, শেষ কখন বন্ধুর সাথে ভালোবেসে মুসাফা করেছেন মনে আছে? যে পায়ে সন্তানের স্বর্গ, সে পা টা ছুঁয়ে দোয়া নেওয়ার সুযোগটাও কম মানুষের হচ্ছে ইদানিং। অনেক দিন রাস্তায় গড়ায়নি বাসের চাকা। সাথে আয়ের চালা ও জীবনের চাকাও বন্ধ পরিবহন শ্রমিকদের। একবেলা রান্না করে তিনবেলা খাওয়ার নতুন অভিজ্ঞতা মধ্যবিত্তদের।

যারা গেল রমজানেও অসংখ্য মানুষকে সাথে নিয়ে বাহারি ইফতার সাজাতো, তারা এবার সামান্য কিছুতেই সেই স্বাদ মেটাচ্ছে। আয়ের একমাত্র উৎস ব্যবসাটা বন্ধ আর দু'মাস। শেষ কখন মুখে মাছ-মাংস উঠেছে সেটাও জানা নেই অনেক পরিবারের। নিষ্ঠুর এক বাস্তবতার মুখোমুখি সারা পৃথিবী। আপন-পর সবাই সংকটে। যারা দিনে এনে দিনে খেত তাদের চোখ এখন কারো সহায়তার দিকে। কারো-কারো অসহায় চোখ সরকারি প্রণোদনার দিকে তাকিয়ে। যে কোনদিন কারো কাছে হাত পাতে নি সেও নিজের ও পরিবারের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে বাধ্য হয়ে নেমেছে রাস্তায়। এটা তো কারো কাম্য ছিল না কখনোই।

কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি এমন কোন চিত্র। কোন শিল্পীর তুলিতে ফোটেনি আগাম অংকন। কোন গবেষকের গবেষণার রাডারেও ধরা পড়েনি এ বিপদের ঘনঘটা। আকস্মিক আবির্ভূত হয়ে রাজত্ব শুরু করেছে পৃথিবীর। কারো কথাই মানছে না সে। তার গাইডলাইনেই চলছে পৃথিবী। সেই অদৃশ্য রাজার নাম 'করোনা'। নভেল করোনা ভাইরাস বলে স্বীকৃত। এ অদৃশ্য শক্তির আগমন গেল বছরের ডিসেম্বরে। চীনের উহানে জন্ম নেওয়া শিশু করোনা ভাইরাস ছয়মাসেই পূর্ণ যৌবনে।

অবাক হচ্ছেন বুঝি? ছয়মাসে কীভাবে পরিপূর্ণ যুবক হয়, তা ভাবছেন তো? কবি বলেছিল, এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার। করোনাও এখন টগবগে যুবক! সে এখন আর চীনের উহানে সীমাবদ্ধ নেই। যদি বলি তাকে ছাড়া কোন দেশও নেই, তাহলে একবিন্দুও বাড়িয়ে বলা হবে না। সে এখন সব দেশের আপন। এযাবৎ এ গোপন ঘাতক কেড়ে নিয়েছে তিন লাখ চল্লিশ হাজারেও বেশি তাজাপ্রাণ।

কত বাবা-মায়ের বুক খালি করেছে; কত স্ত্রী অকালে সাদা শাড়ি বরণ করেছে; কত সন্তান এতিমের পরিচয় সঙ্গী করেছে; কত বাবা-মায়ের অবুঝ শিশুটি চিরদিনের জন্য চোখ বুঁজেছে তার কোন অন্ত নেই। প্রায় ৫১ লাখের বেশি মানুষ জীবন-মরণ সংকটাপন্ন। এখন যায়-যায় প্রাণ। সন্তানটা মায়ের শয্যাশায়ী করুণ পরিস্থিতি দেখেও কাছে যেতে পারছে না। গর্ভধারিণী মাও সন্তানকে পরম মমতায় আলিঙ্গন করতে না পারায় নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে চলছে। এ করোনা যুদ্ধের সাহসী যোদ্ধাদের (ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী) প্রাণপণ চেষ্টায় বাঁচার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরেছে সাড়ে ১৯ লাখের বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপের মাঝে এটা খুশির সংবাদ, আলহামদুলিল্লাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ করোনা থেকে বাঁচার জন্য দিয়ে যাচ্ছে বিবিধ পরামর্শ।

এ পরামর্শে চলছে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ। করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে বিশ্বের প্রায় দেশ এখন লকডাউনে। আমাদের দেশে এ মরণঘাতি ভাইরাস সনাক্ত হয় এ বছরের ৮ মার্চ। তার আগ থেকে দেশের সরকার সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও পরবর্তীতে আমরা প্রায় পরিপূর্ণ লকডাউনে চলে যাই। বন্ধ হয়ে যায় সবকিছু। থেমে যায় গাড়ির চাকা। পড়ে যায় ব্যবসায় তালা। এমন কী করোনা সংক্রামণ থেকে বাঁচতে মসজিদে জামাত পর্যন্ত সীমিত করা হয়। কিছুদিন বন্ধ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান কাবা শরীর ও মদিনা শরীফে। বেধে দেওয়া হয় বিবিধ নিয়ম।

সারা পৃথিবীর সচেতন মহল স্লোগান – তুলে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। এ করোনা যুদ্ধের হাতিয়ার গোলাবারুদ নয়, বরং ঘরে থাকাটাই প্রধান হাতিয়ার। আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের, পরিবারের ও দেশের স্বার্থে নিজেকে ঘরবন্দী করেছি সেই ২৩ মার্চ থেকে। লেখালেখি, ফেইসবুকে লাইভ প্রোগ্রাম, টুকটাক গবেষণা আর আমার রাজপুত্র ইয়াসির ইসলাম নূরের এই-সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে-দিতে আমার সময় বেশ উপভোগ কাটছে আলহামদুলিল্লাহ।

নিজের পিতৃতূল্য বড় আব্বাটা (আলহাজ্ব ইউনুস মিয়া চৌধুরী) অসুস্থ আজ কয়দিন। পরম আদরে কয়েকবার বলেও ফেলেছে, বাবা তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে, একটু আয়। আবেগটাও আমার যেতে বলছে বার-বার। পক্ষান্তরে আমার সচেতন বিবেক বলে – তুমি যাবে ঠিক। তোমার বড় আব্বার মৃত্যুর দূত হয়ে যাবে না তো? এমন প্রশ্নে আমি থমকে গেলাম! রাস্তায় কারো সংস্পর্শে যদি আমি আক্রান্ত হই, আমি যুবক বলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারি। কিন্তু, এ বয়োজ্যেষ্ঠ জেঠার জন্য আমি হব মৃত্যুর জম। সন্তানটা আমার দাদার পরশে যেতে ঘুমেও কেঁদে উঠে। অবুঝ শিশুটিকে মানিয়েছি পরিবারের সুরক্ষা ও দেশের আইনের প্রতি সম্মান রেখে।

গত কয়েকদিন আগে আমার অবুঝ সন্তানকে একটু পরীক্ষা করলাম, 'আব্বু চল মার্কেটে যাই।' আমার অবুঝ সন্তান বলে উঠল, 'আব্বু সেখানে অসুখ আছে অসুখ! আব্বু আমার কাপড় আছে। আমি মার্কেটে যাব না।' আমার অবুঝ ছেলেটাও বুঝে, মার্কেটে অসুখ (করোনা) আছে। আর আমাদের দেশের এক শ্রেণির মার্কেট পাগল যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষ বুঝে না, মার্কেটে যে নতুন কাপড়ের সাথে মরণঘাতী করোনা ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে। এ ফ্রি করোনা নিজের ও পরিবারের সকলের কাফনের কাপড়সহ ফ্রি করে দিবে, সেই বোধোদয় হচ্ছে না কিছু নারীর। নারী বলার কারণ হচ্ছে, মার্কেটের প্রতি একটু বেশি আগ্রহী তারা। স্বামী প্রবাসে চাকরিহারা অথবা বেতন বন্ধ। অসহ্য কষ্টে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে কারো-কারো। এ রমজানে ইফতারও জুটছে না অনেকের ভাগ্যে। আর দেশে স্ত্রী দুবাই ওয়ালার বউ বলে দিব্বি মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ অযুহাত দিচ্ছে সন্তানের। আবার কেউ তো সরাসরিই বলছে – ঈদ এসেছে, মার্কেট করব না? শুধু প্রবাসীদের স্ত্রী বলে না, এ দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই দেশীয়রাও।

আমার অভিযোগ প্রবাসীদের নিয়ে নয়, আবার সব প্রবাসীর স্ত্রীদের নিয়েও না। যেসব মা-বোনেরা এ পরিস্থিতিতেও মার্কেটে যাওয়াটা ফরজে আইন ধরে নিয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমার অভিযোগের আঙ্গুল। মার্কেটে যেতে বিপদগ্রস্ত স্বামী থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করা অতিচালাক স্ত্রী ও নিঃস্ব পিতাকে ছাড় না দেওয়া সন্তানদের দৃশ্যগুলো যখন দেখি, তখন ভেসে উঠে আমিরুল মুমেনিন ওমর ফারুক (রাঃ)-এর ঈদ শপিং এর শিক্ষনীয় করুন ঘটনা।

ঈদের আগের দিন অর্ধ পৃথিবীর ন্যায়পরায়ণ বাদশা – হযরত ফারুকে আজম (রাঃ)-এর স্ত্রী খলিফাকে বললেন, 'আমাদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না হলেও চলবে। কিন্তু ছোট বাচ্চাটি ঈদের নতুন কাপড়ের জন্য কাঁদছে।' খলিফা বললেন, ‘আমার তো নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই!’ পরে খলিফা ওমর (রাঃ) হযরত আবু উবাইদাকে এক মাসের অগ্রিম বেতন দেয়ার জন্য চিঠি পাঠালেন। প্রায় অর্ধ পৃথিবীর শাসক হযরত ওমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকে অর্থমন্ত্রী ছিলেন হযরত আবু উবাইদা (রাঃ)। তখন রাষ্ট্রীয় কোষাগার তিনিই দেখাশুনা করতেন। সমগ্র মুসলিম জাহানের খলিফা যিনি, যিনি অর্ধ পৃথিবী শাসন করছেন, তাঁর এ ধরনের চিঠি পাঠ করে হযরত আবু উবাইদার চোখে পানি এসে গেল।

হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) খলিফাকে টাকা না দিয়ে চিঠির উত্তরে লিখলেন ‘আমীরুল মু’মিনীন! অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে ফায়সালা দিতে হবে।' প্রথমত, আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি না? দ্বিতীয়ত, বেঁচে থাকলেও মুসলমানেরা আপনাকে খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা? চিঠি পাঠ করে হযরত উমর (রাঃ) কোন প্রতি উত্তর তো করলেনই না, বরং এত কেঁদেছেন যে তাঁর চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে গেল। আর হাত তুলে হযরত আবু উবাইদার জন্য দোয়া করলেন- ‘হে আল্লাহ! আবু উবাইদার উপর রহম কর, তাঁকে হায়াত দাও।’ হ্যাঁ, অর্ধ পৃথিবীর ন্যায়পরায়ণ বাদশা ফারুকে আজমের আর উনার পরিবারের জন্য ঈদের নতুন জামাকাপড় কেনা হয়নি। উনি চাইলে পারতে, কোন এক যুক্তিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ নিতে, কিন্তু তা না করব বরং অর্থমন্ত্রীর সাহসী উত্তরের জন্য তাকে দোয়া করলেন। এ পৃথিবীতে এমন দৃশ্য বিরল বলেই আজ গণতন্ত্রে পাঠ্যবইয়ে আবদ্ধ।

ঐ সময়ে ছিল মুক্তবুদ্ধি চর্চার স্বাধীনতা। ছিল জনগণের পূর্ণ অধিকার। তাই তো ফারুকে আজমের শাসনামলে যাকাত গ্রহণের সংখ্যা পর্যন্ত শূন্যের নেমেছিল। খলিফার শাসন এতো সুচারু ছিল। এত বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল যে, বিধর্মী ইতিহাসবিদগণও ফারুকে আজমের প্রসংশা করতে কার্পণ্য করেনি। আর নেতৃত্বের মডেল এ খলিফাই ঈদ করেছেন পুরাতন কাপড় দিয়ে। শুধু কী তিনি? না না। উনার অবুঝ শিশুও। এগুলো শুধু ইতিহাস নয় বরং ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও বেঁচে থাকার প্রেরণা। একটু ভাবুন ত আমি আপনি সাধারণ মানুষ। কোথায় বাদশা আর কোথায় আমরা। বাদশার ঈদ যদি হয় পুরাতন কাপড়ে আমরা কেন প্রাণ বাঁচাতে পুরাতন কাপড়ে ঈদ করতে পারবো না? ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ (দ.)-এর অনেক ঈদ পুরাতন কাপড়ে কেটেছে।

ইসলামের ত্রাণকর্তা সিদ্দিকে আকবর (রাঃ), পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীদের একজন উসমান যুন্নুরায়ন (রাঃ), মওলায়ে কায়েনাত আলী (রাঃ), খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমা (রাঃ), জান্নাতের যুবাসরদার হাসনাইনে করিমাইনের ঈদের ইতিহাস লেখতে গেলে চোখ ভিজে আসবে, কলম বার বার পরে যাবে হাত থেকে। আমরা এ মহান হাস্তিদেরই অনুসারী দাবীদার। ত আমরা কেন মনকে মানাতে পারবো না? ঈদকে যদি আসলে ইসলামের প্রধান উৎসব বলে মনেপ্রাণে ধারণ করেন তাহলে প্রিয় নবী (দ.) ও সাহাবায়ে কেরামের ঈদ পালনের ন্যায় আমাদেরও ঈদ পালন হবে আদর্শ মুসলিমের পরিচয়। আসুন এবার ঈদ প্রিয়জনকে বাঁচাতে প্রিয় জনের পাশে গিয়ে নয় বরং প্রিয়জনের জন্য প্রভুর কাছে দোয়ার মাধ্যমে কাটায়। ঈদের পূর্ব রাত সারাবছরের শ্রেষ্ঠ রাতের একটা। এ রাত দোয়া কবুলের সুবর্ণময় মূহুর্তের অন্যতম। হেলায় না কাটিয়ে ইবাদতে কাটুক মর্যাদাপূর্ণ রাতটি। মহান আল্লাহ আমাদের সিয়াম সধনাকে কবুল করুন। এবারের ঈদ হোক ইবাদতে।

দোয়া ও প্রার্থনায়। করোনার থেকে মুক্তি পেয়ে বিশ্ব যেন তার চিরচেনা রূপে আবার ফিরে যায় সে প্রার্থনায়। অন্ধকার কেটে যেন আলোর ঝলকানিতে ভরে উঠে আমাদের এ প্রিয় বাংলাদেশ। স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে নয় বরং ঈদ কাটুক মহামহিম খোদার জিকির আর প্রিয় মুহাম্মদ (দ.)-এর দরুদে।

লেখক ও প্রাবন্ধিক: এম সাইফুল ইসলাম নেজামী

শিক্ষার্থী- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (এম এ)

আরও খবর

Sponsered content

Powered by