বাংলাদেশ

কারাগারে মৃত্যুঝুঁকিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা: রিজভী

  প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৫:৫৫:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

কারাগারে মৃত্যুঝুঁকিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা: রিজভী

দেশের কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘কেউ যাতে টু-শব্দও না করতে না পারে সেজন্য কারাগারের ভেতরে-বাইরে বিরোধীদলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের ওপর নানাবিধ অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। কারাবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়। বন্দিদের চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালে ফেলে রাখা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কারাগারে দম বন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়ানোর জন্য গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে।’

‘তবে জেল হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’ বলেন রিজভী।

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের বিষয়ে সম্প্রতি বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিককালে ধরপাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মী, সমর্থক দিয়ে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তারা অসুস্থ হচ্ছেন এবং সেখানে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন।’

দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম হলেও সেখানে দেশের গণমাধ্যমের হিসাবে প্রায় ৮৮ হাজার বন্দি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অবৈধ দখলদার সরকার তাদের দখলদারত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকপুরীতে পরিণত করেছে। ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। সরকারের প্রতিপক্ষদের জীবন রাষ্ট্রীয় নজরদারি বন্দুকের নলের নিচে বন্দি। দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।’

‘বাইরের মতো কারাগারগুলোও মৃত্যু উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে। দেশের ৬৮টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল। যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু আতঙ্কে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা। গায়েবি মিথ্যা মামলায় সুস্থ সবল নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করে কারাগারে নিক্ষেপের পর লাশ বানিয়ে বের করা হচ্ছে। কারাগার থেকে বের হচ্ছে লাশের সারি।’ অভিযোগ করেন রিজভী।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির নেতাকর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ। গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের, যাদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী।’

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম নির্যাতন করে অসুস্থ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

রিজভী বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজ-রসুন-ডাল-চালের দাম নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন। সরকারের কোনো বিধি-বিধান তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতের বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতো না।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন লোকসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির সরকার বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ভোটারদের মনোতুষ্টির জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির নতুন ফন্দি আটা নিয়ে ব্যস্ত। শেখ হাসিনা মনে করছেন ভোটাররা গোল্লায় যাক, আমার সোনার হরিণ চাই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি বানিয়ে রাখছে, এ নিয়ে তার কিছু যায়-আসে না। আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড এক নীরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ।’

গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৫টি মামলায় ৪৩৬ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর থেকে শুরু হওয়া ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ সফল করার আহ্বানও জানান এই বিএনপি নেতা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by