খুলনা

কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ী রেজাউল হত্যার মূল মাষ্টারমাইন্ড চেয়ারম্যান স্বপন মাষ্টার!

  প্রতিনিধি ১০ নভেম্বর ২০২০ , ১:৫৫:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

কুষ্টিয়া:

কাঠ ব্যবসায়ী রেজাউলকে হত্যার জন্য দুই দফা গোপন মিটিং হয়। হত্যার দিন সকাল থেকে রেজাউলের উপর নজর রাখা হয়। হত্যার মুল মিশনে অংশ নিতে বাইরের এলাকা থেকে তিনজনকে ভাড়া করা হয়। জোগাড় করা হয় অস্ত্র। সুবিধামত স্থানে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে ২০ মিনিটের মধ্যে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। নিজে উপস্থিত থেকে রেজাউলের মৃত্যু দেখেন। হত্যকারীদের হাতে রক্তের দাগ শুকানোর আগেই ভাড়া করা টাকা পরিশোধ করা হয়। লাশ ফেলে রেখে অস্ত্র গুছিয়ে নিয়ে বীরদর্পে চলে আসে হত্যাকারীরা। এইসবের মুল মাষ্টার মাইন্ড স্থানীয় কুষ্টিয়ার আব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন মাষ্টার। চেয়ারম্যান স্বপন মাষ্টারের একান্ত সহচর গ্রেফতারকৃত আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় এমনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মহাসিন হাসান এই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, আনোয়ার হোসেনের দেওয়া জবানবন্দিতে রেজাউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের দেড়িপাড়া গ্রামের মাঠে রেজাউল ইসলাম (৩২) নামে যুবককে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। রেজাউল ইসলাম আব্দালপুর গ্রামের মসলেম হকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী।

আসামি আনোয়ার হোসেন মল্লিক পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। আনোয়ার হোসেন পশ্চিম আব্দালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন মাস্টারের মোটরসাইকেল চালানোর কাজ করতেন প্রায় ৭-৮বছর।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি আনোয়ার হোসেন মল্লিক বলেন, আমি মোঃ আনোয়ার হোসেন মল্লিক। কৃষিকাজ করি। আমি দীর্ঘদিন যাবত পশ্চিম আব্দালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন মাস্টারের মোটরসাইকেল চালানোর কাজ করি। আনুমানিক ৭-৮বছর হবে। আমি চেয়ারম্যানের সাথে রাতে ঘুম বাদে সব সময় থাকতাম। সে যেখানে যেতে চাইত সেখানে আমি নিয়ে যেতাম। প্রায় দুই বছর আগে আমাদের গ্রামে গ্রাম্য কাইজাতে চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন মাষ্টারের ভাই ময়নুউদ্দিন বিশ্বাস নিহত হয়। কিছুদিন পর মঈনুদ্দিনের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা হালিম জানতে পারে যে তার বাবাকে রেজাউল হত্যা করেছে। রেজাউলের বাড়ি টেকপাড়া (পশ্চিম আব্দালপুর)। হালিম পরবর্তীতে স্বপন চেয়ারম্যানের কাছে এসে তার পিতা হত্যাকারীর কথা জানায়। হালিম স্বপন চেয়ারম্যানকে বলে যে, চাচা আমার বাবাকে হত্যা করে রেজাউল বুক উচু করে ঘুরে বেড়াবে আর আমরা কিছু বলতে পারব না, আপনি কি করছেন?। চেয়ারম্যান তখন হালিমকে বলে, চুপ থাক আমি বিষয়টা দেখবো। চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের গ্রামের দিপু চেয়ারম্যানের আপন ভাই সহিদুল, সেন্টু ও মনিরুলকে ডাকে। সকাল ১০টার দিকে ওনারা সবাই বিশ্বাস পাড়া মাদ্রাসার পাশে মুরগির ফার্মের মধ্যে গোপন মিটিং করে।

ওই সময় রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তখন শহিদুল বলে, রেজাউলকে মারতে হলে আমরা নিজেরা মারলে হবে না, বাইরের লোক দিয়ে মারতে হবে, এতে ভালো খরচ পাতি লাগবে। চেয়ারম্যান বলে ঠিক আছে ব্যাপারটা আমি তাহলে দেখছি। এই বলে চেয়ারম্যান পার্শবর্তি হরিনাকুন্ডু থানা (ঝিনাইদহ) ভায়না ইউনিয়নের সমীর চেয়ারম্যানকে ফোন করেন। ফোন দিয়ে তিন জন সাহসী লোক চান। সমীর চেয়ারম্যান স্বপন চেয়ারম্যানকে জানান যে লোক নিলে তো ভালো খরচ পাতি দেওয়া লাগবে। স্বপন চেয়ারম্যান বলেন, ওটা আমি দেখবো। রেজাউলকে হত্যার আগের দিন স্বপন চেয়ারম্যান, দিপু, সহিদুল, সেন্টু, মনিরুল, রনক, সবুজ ও মাসুদরা মিলে রাতের বেলা মাদ্রাসার পিছনে আবার গোপন মিটিং হয়। মিটিংয়ে সহিদুলকে বলা হয় সে যেন পরদিন সারাবেলা রেজাউলকে ফলো (নজর) করে। রনক, মাসুদ ও সবুজকে (ভাড়া করার লোক) বলা হয় তারা যেন পরদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে লক্ষীপুর ছোট ব্রিজের পাশে থাকে। পরিকল্পনা মতো ঘটনার দিন রনক, মাসুদ ও সবুজ ল²ীপুর ব্রিজের কাছে সময় মতো চলে আসে।

অন্যদিকে সেন্টু, মনিরুল ও দীপুরাও ব্রিজের কাছে যান। অপরদিকে, সহিদুল চেয়ারম্যানকে ফোন করে বলে যে, পাওয়া গেছে আপনি মল্লিককে নিয়ে ১১মাইল মাঠে যান। এই কথা শুনে চেয়ারম্যান আমাকে নিয়ে ১১মাইল মাঠে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রেজাউলকে রনক, সবুজ, সেন্টু, মনিরুল ও দিপুরা মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে। ২০ মিনিটের মধ্যে মারা গেলে শহিদুল চেয়ারম্যানকে বলে যে, ভাই কাজ হয়ে গেছে টাকা দেন। এরপর চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকা সহিদুলকে দেয়। সহিদুল সে টাকা রনক, মাসুদ ও সবুজকে দিয়ে তাদের দ্রæত চলে যেতে বলে। অস্ত্রপাতি নিয়ে সহিদুল মাঠ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। আমি চেয়ারম্যানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। চেয়ারম্যানকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আমি আমার বাড়িতে চলে আসি।

এ বিষয়ে আব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন বলেন, আনোয়ার হোসেন মল্লিকের সাথে আমার প্রায় তিন বছর কোন সম্পর্ক নেই। সে এখন আমার সামাজিক বিপক্ষ দলে যোগ দিয়েছে, তাই আমাকে ফাসাঁতে সে এখন বানোয়াট গল্প বলছে।

প্রসঙ্গ, হত্যার প্রতিশোধে হত্যা। এই রাজনীতি কুষ্টিয়ার ইতিহাসের শুরু থেকেই। এভাবে চলতে থাকলে কুষ্টিয়ায় হত্যার নৃশংসতা বন্ধ হবে না। সচেতন মহলের দাবী এইসব হত্যার দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি হলেই কমে আসবে প্রতিশোধের হলিখেলা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by