ময়মনসিংহ

কেন্দুয়ায় পুলিশের তৎপরতায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ

  প্রতিনিধি ৬ জুলাই ২০২০ , ৮:০৯:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : নেত্রকোণার কেন্দুয়া পুলিশের তৎপরতায় পরিবহনে সব ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় স্বস্তিতে পরিবহন শ্রমিকরা। যেখানে প্রতিদিন গুনতে হতো শত শত টাকার চাঁদা তা এখন দিতে হচ্ছে না তাদের। এমনকি যেসকল চাঁদাবাজরা চাঁদা তুলতো তাদেরও দেখা যাচ্ছে না রাস্তায়। রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারি নিদের্শনা বাস্তবায়নে কেন্দুয়া থানা পুলিশ ও পেমই তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ বেশ তৎপর। এসব কার্যক্রম মনিটরিং করছেন ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। রাস্তায় ট্রাক আটকিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ইতিমধ্যে কেন্দুয়া থানায় একটি দ্রæত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন ধান ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন। রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কলসহাটি গ্রামের বাসিন্দা ও রোয়াইলবাড়ি বাজারের বিশিষ্ট ধান ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে বলেন, আমতলা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে সাইকুল ইসলাম (৪৫)সহ কয়েকজন মিলে রাস্তায় ধান ভর্তি ট্রাক আটকিয়ে চাঁদাবাজি করে। ট্রাক প্রতি ৫০০ টাকা না দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালককে মারধোরসহ নানাভাবে হেনস্থা করে। ঘটনার আগের দিন ৫০০টাকা দিয়ে একটি ট্রাক ছাড়িয়ে নেন তিনি। পরের দিন একই অবস্থা সৃষ্টি করলে কয়েকজন ব্যবসায়ী সাইকুলকে ধরে ফেলেন এবং পেমই তদন্তকেন্দ্রের পুলিশকে খবর দিলে তাৎক্ষনিক এসআই মানিকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ধৃত সাইকুলকে থানায় নিয়ে যান এবং ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। কেন্দুয়ায় হটাৎ করেই থেমে গেছে সড়কের চিরচেনা চাঁদা আদায়ের দৃশ্য। উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার ও রাস্তার মোড়ে অন্তত ১৫-২০ স্থানে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নামে অটোরিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, পিকআপ ও ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হতো। আগে চাঁদাবাজরা লাঠি হাতে নিয়ে সড়কে অবস্থান নিতেন। বর্তমানে উপজেলায় চাঁদা আদায়ের দৃশ্য দেখা যায় না। হটাৎ করে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবহন শ্রমিককরা রয়েছেন বেশ স্বস্তিতে। সান্দিকোণা ইউনিয়নের ডাইকী গ্রামের অটোরিক্সা চালক লিটন বলেন, আগে প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে শ্রমিক সংগঠন ও সমিতির নামে মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিতে হতো। টাকা না দিলে গাড়ি রাস্তার পাশে সাইড করে রাখতো। এমনকি টাকা না দিলে হেনস্থা করতো। পুলিশের অভিযানের পর থেকে এখন তাদের দেখা যায় না। গড়াডোবা ইউনিয়নের দামিনা গ্রামের অটোচালক মামুন জানায়, করোনার শুরু হইছে থেকে রাস্তায় যাত্রী কমে গেছে। আগে দৈনিক ৮/৯ শত টাকা টাকা ইনকাম করতে পারতাম। করোনা শুরু হইছে থেকে ৫/৬ শত টাকা ইনকাম হয়। ৪০০ টাকা গাড়ির ভাড়া বাবদ মালিককে দিতে হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০ টাকা বিভিন্ন মোড়ে জিপি’র নামে চাঁদা দিতে হতো যেকারনে খুব খারাপ অবস্থা আমাদের চলছিল। এখন কয়দিন ধরে এই চাঁদা দিতে হয় না এবং কেউ নিতেও আসে। আল্লাহ রহমত এখন আমরা খুব ভাল আছি। ওসি স্যার আমাদের বলছেন কেউ চাঁদা চাইলে থানায় ফোন দিতে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কেন্দুয়া বাসস্ট্যান্ডে সিএনজি চালিত এক অটোরিক্সা চালক বলেন, আমাদের এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও ঈশ্বরগঞ্জ, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহে এখনো তারা কৌশলে চাঁদা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এখনো ঈশ্বরগঞ্জে ২৫ টাকা, শম্ভুগঞ্জে ১০ ও ময়মনসিংহের ব্রীজে ২০ ও চরপাড়া মোড়ে ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে তারা স্পট পরিবর্তন করে এসব চাঁদায় আদায় করছেন। চরপাড়া মোড়ের চাঁদাটা এখন সিএনজি পাম্পে রাকিব নামে একজন আদায় করে বলে জানান তিনি। মটরযান শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দুয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজউর রহমান বিপুল বলেন, তাদের সংগঠনের নামে কেউ রাস্তায় চাঁদা তুলেন না। যদি কেউ চাঁদা তোলার চেষ্টা করে তাকে যেন আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।
কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়সহ উর্ধতন কতৃপক্ষে নির্দেশে রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধে এবং যাত্রীগণের ভোগান্তি লাগবে অধিকাংশ সময় আমি নিজেই রাস্তায় অবস্থান করছি। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা রাস্তায় কোন চাঁদা আদায় করবে না বলে আশ্বস্থ করেছে। চাঁদা আদায়ের জন্যে ইতিমধ্যে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মিডিয়াকর্মী ও চালকসহ জনসাধারণের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে অবৈধ চাঁদা আদায়ের সঙ্গে যদি আমার কোন পুলিশ সদস্যও জড়িত থাকে তাহলে আমাকে অবগত করবেন। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সড়কে যেকোন ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমাদের পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী ও কেন্দুয়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান মহোদয় এ ব্যাপারে সার্বিক তত্ত¡াবধান এবং প্রয়োজনীয় দিক-নিদের্শনা দিচ্ছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by