চট্টগ্রাম

খাগড়াছড়িতে পেঁপে চাষ করে সাফল্য

  প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ , ৩:৩৯:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ ইব্রাহমি শেখ, পার্বত্য চট্রগ্রাম ব্যুরোঃ

পাহাড়ের ঢালু আর মাইনী নদীর তীরে ফসলি জমিতে পেঁপে চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছে এক শিক্ষিত তরণ। নিজেদের পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শুর করে রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ । ২০২০ সালে শুর করা এই বাগানে গত দুই মাস ধরে ফলন আসতে শুর করেছে। ইতিমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন সে। তার এমন সাফলতা দেখে অনেক চাষীকে পাহাড়ী ভূমিতে পেঁপে চাষে অনুপ্রানিত করেছে।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কামাক্যাছড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রিয়দর্শীর চাকমার পেঁপে বাগান। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাইনী নদীর তীরে নিজেদের যে জমিতে রবিশস্য কিংবা ধানের চাষ করত সেখানেই গড়ে তুলেছে পেঁপের বাগান। প্রায় ৩০ শতক জায়গাজুড়ে রোপণ করেছে ৩২০ টি পেঁপে গাছ। পেঁপে চাষ শুর করা প্রসঙ্গে এই তরণ কৃষি উদ্যোক্তা প্রিয়দর্শী চাকমা বলেন, কাচালং ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০০০ সালে স্মাতক পাস করার পর দীর্ঘসময় বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) তে কাজ করি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে সিন্ধান্ত নেই নিজেই কিছু একটা করব।

বাড়িতে ফিরে কৃষি কাজে মনোযোগ দিই। পত্রিকায় রেড লেডি জাতের পেঁেপ চাষের উপর একটা প্রতিবেদন পড়ে বিষয়টি সর্ম্পকে খোঁজ খবর নিতে থাকি, এই বিষয়ে কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতা চায়। কৃষি বিভাগের পরার্মশে রেড লেডি জাতে পেঁপের আবাদের সিন্ধান্ত নিই। নিজের জমানো টাকা ও কষি ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে।

রেড লেডির বীজ আমদানীকারী প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা সীড থেকে ১০ গ্রাম বীজ নিয়ে নিজেই পলিব্যাগে চারা তৈরি করে। ৩০ শতক জায়গায় সারিবদ্ধ করে প্রায় ৩২০ টি চারা রোপন করি। পাহাড়ের মাটি পেঁপে চাষের উপযুক্ত এবং নদীর তীরের জমিতে প্রচুর পলি জমার কারনে ফলন ভালো হয়। রোপণের প্রায় ৮ মাস পর পেঁপে গাছে ফুল আসতে শুর করে। দুই মাস পরই ফলন তোলার সময় হয়। গত দুই মাসে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার করে ফলন বিক্রি করছি। একটি বড় সাইজের পেঁপের স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। মাটির উর্বরতা শক্তির কারনে বেশ ফলন হয়। একেকটি পেঁপে ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়েছে।

রড লেডি জাতের পেঁপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর অধিক চাহিদা। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি আরো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফলন বাগানে আছে। বৈরী হ্ওায়া না থাকলে এই বাগান থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আয় করা যেত। বিভিন্ন সময় একটানা বৃষ্টি,শিলাবৃষ্টি ও বন্যার কারনে গাছের ক্ষতি হয়েছে। গত মৌসুমে শিলা বৃষ্টির কারনে প্রায় ২০০০ পরিপক্ক পেঁপে নষ্ট হয়েছে। নিয়মিত পানি সেচ, জৈব সার প্রয়োগের কারনে বাগান থেকে ভালো ফলন পেয়েছি। ভবিষত্যে আরো বড় আকারে চাষ করার চিন্তা আছে। তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের নদীর তীরে জমি আর পাহাড়ের ঢালু অংশে এই জাতর পেঁপে চাষে দারন সম্ভাবনা আছে। তবে ভালো বিপণন ব্যবস্থা থাকলে কৃষক আরো লাভবান হত। শুধুমাত্র ছত্রাকের আক্রমন ছাড়া অন্য রোগবালাই কম হয় বলে বাড়তি খরচ কম হয় এতে।

কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেড লেডি জাতের পেঁপে বেশ সুস্বাদু এবং পাহাড়ের ঢালু অংশে এর চাষাবাদ বেশ সহনীয় বিশেষ করে পাহাড়ের ২৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রী ঢালু অংশে এই জাতের পেঁপের ফলন অধিক।

জমিতে প্রচুর জৈব সার ব্যবহারের কারনে এইবার ভালো ফলন পেয়েছে কৃষক প্রিয়দর্শী চাকমা। তবে পাহাড়ে পেঁপে বিপণন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হওয়া উচিত। বিশেষ করে সমতল অঞ্চলে বাজারজাত করা গেলে কৃষক পেঁপে চাষে আরো আগ্রহী হবে বলে জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (দীঘিনালা ব্লক) সমর বিজয় চাকমা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by