চট্টগ্রাম

গ্রেনেড হামলা: নিহত আতিকের সন্তানের মেলেনি সরকারি চাকরি

  প্রতিনিধি ২২ আগস্ট ২০২২ , ৬:৪৬:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি: বটবৃক্ষ বাবাকে হারিয়ে আজ আমার সন্তানরা এতিম। প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় তিন ছেলে ও এক মেয়ের মুখে দুই বেলা ভাত তুলে দিতে পারলেও বাবার অভাব পূরণ করতে পারিনি। আজও তারা বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে।

এভাবেই বলছিলেন ভয়াল ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচআনী গ্রামের আতিক উল্লাহর স্ত্রী লাইলী বেগম।

গত শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে আতিকের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় লাইলী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ২১ আগস্ট এলেই শুধু সাংবাদিকরা খোঁজখবর নেন। এছাড়া অন্য সময় কেউ আসেন না।

তিনি বলেন, ৫ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আমার দুই সন্তানকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর পার হলেও এখনো মেলেনি চাকরি। তাই এতিম সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে আমি শঙ্কিত।

আতিকের চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে তানিয়া আক্তার (২৫)। আর্থিক দৈন্যের কারণে এইচএসসির পর থেমে যায় তার পড়ালেখা। তিন বছর আগে তানিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন লাইলী বেগম।

সংসারের প্রয়োজনে বড় ছেলে মিথুন (২৪) চাকরি করছে। এ কারণে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ পড়ছেন তিনি। মেজ ছেলে মিন্টু (২২) অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ছোট ছেলে শাকিব (১৬) এইচএসসি শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

নিহত আতিক উল্লাহর বড় ছেলে মো. মিথুন সরকার জানায়, এখনো খুঁজি আমরা বাবাকে। রাতের আঁধারে মায়ের কান্না আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাবার সব স্মৃতি। তখন মনের অজান্তেই হারিয়ে যাই বাবার সান্নিধ্যের অপার আনন্দের দিনগুলোতে। আর তখনই দুচোখ বেয়ে বেরিয়ে পড়ে অশ্রু। তিনি বলেন, বাবার অভাব আমরা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করি।

নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মতলব উত্তরের আতিকের শোকে কাতর স্বজনরা। প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা এখনো তাদের কাঁদায়। তবে সরকারিভাবে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।

এদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘটে যাওয়া গ্রেনেড হামলার রায় হলেও পুনরায় আপিল করায় এখন হাইকোর্টে তা বিচারাধীন। এমতাবস্থায় বিচারের রায় দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ওই ঘটনায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তরের পাঁচআনী গ্রামের আতিক উল্ল্যাহর স্বজনরা। দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

যদিও ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দুই পরিবারেকে ১১ লাখ টাকা করে অনুদান দেন। এরপর পুনরায় গত ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল আতিক উল্লাহর ৪ সন্তান ও স্ত্রীকে ২৫ লাখ টাকা দেন। যা দিয়ে তাদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

উল্লেখ্য, আতিকুর রহমান ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ঢালাই শ্রমিকের কাজ করতেন। শ্রমিক লীগের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগদান করেন তিনি এবং সেখানেই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি।

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by