চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে “নৌকা“ ডুবিয়ে উড়তে চায় “ঈগল“

  প্রতিনিধি ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৬:৪৬:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে “নৌকা“ উড়তে চায় “ঈগল“

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে নৌকা বঞ্চিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে। নগরী ও উপজেলার বিভিন্ন আসনে সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী “ঈগল“ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। তাদের কর্মী সমর্থকরা ইতোমধ্যে প্রচার করছেন থাবা দিয়ে নৌকাকে উঠিয়ে নিয়ে নির্বাচনে বিজয় লাভ করবেন। নগর ও উপজেলা মিলিয়ে চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন ১৬টি। তারমধ্যে সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম-৪) রাউজান (চট্টগ্রাম-৬), রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম-৭), কোতোয়ালী (চট্টগ্রাম-৯), আনোয়ারা (চট্টগ্রাম-১৩) এ পাঁচটি আসনে নৌকার স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বাকী আসনগুলোতে “স্বতন্ত্র“ প্রার্থীর মোড়কে রয়েছে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী। হাটহাজার (চট্টগ্রাম-৫) এবং নগরীর চান্দগাঁও ও বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত (চট্টগ্রাম-৮) আসনটি জোটের শরীক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও সেখানেও রয়ে গেছে আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থী। সীতাকুন্ডের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, রাউজানের ফজলে করিম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়ায় ড. হাছান মাহমুদ, নগরীতে নওফেল এবং আনোয়ারায় জাবেদ নির্ভার থাকলেও নৌকা-লাঙ্গল মিলিয়ে সরকারী দলের অন্য ১১ প্রার্থী রয়েছেন টেনশনে। এই এগার প্রার্থীর বিপরীতে সাতটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের “ঈগল“ প্রতীক কি পরিকল্পিত নাকি কাকতালীয় সেটাও ভাবাচ্ছে চট্টগ্রামবাসীকে। ১৬টি আসনের মধ্যে ২টি আসন জাতীয় পার্টিকে দেয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তারাও আছেন বিপদে।

মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে দেখা গেছে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নৌকার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল। তার বিপরীতে আরও ৬প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক উপজেলায় চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থীর সাথে তাকে কঠোর লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকা পেয়েছেন প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খাদিজাতুল কোবরা সনি। এখানে তাকে পরীক্ষায় নামতে হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু তৈয়ব (ঈগল) এর সাথে। এ আসনে তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (ফুলের মালা) থাকলেও নৌকা না পাওয়ায় তেমন কোনো প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা নেই ভোটারদের মাঝে।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আবারও নৌকার মাঝি হয়েছেন মাহফুজুর রহমান মিতা। এখানে আরও ৭ প্রার্থী থাকলেও স্বাচিপ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রাথী ডাঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী (ঈগল) তাকে কঠিন তোপের মুখে ফেলবে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (লাঙ্গল)কে আসনট ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখানে প্রথমে নৌকা প্রাপ্ত এম এ সালাম তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেও থেকে গেছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী (ঈগল)। ফলে এখানে আনিসের লাঙ্গলের ফারা কেটে গেছে এমনটি ভাববার কোনো সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম-

৮(বোয়ালখালী) আসনটিও জাতীয় পার্টির সোলেমান আলম শেঠকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে তুলে নেয়া হয়েছে নৌকা পাওয়া বর্তমান এমপি নোমান আল মাহমুদকে। কিন্তু এখানেও ফারা কাটেনি লাঙ্গলের। এখানে সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান, ওয়েল ফুড গ্রুপের আব্দুচ ছালাম রয়ে গেছে মাঠে। ‘কেটলী‘ প্রতীক নিয়ে তিনি মাঠে থাকায় শেঠের বিড়ম্বনার শেষ নেই।

চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং) আসনে যথারীতি নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ মহিউদ্দিন বাচ্চু। এখানে আরও ৮ প্রার্থী থাকলেও বাচ্চুর টেনশন সাবেক মেয়র মনজুর আলম স্বতন্ত্র (ফুলকপি) এবং নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ স্বতন্ত্র (কেটলি) এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ২৭জনকে টপকে নৌকা জিতেছেন এম এ লতিফ এমপি। এখানে আরও ছয় প্রার্থী নয়, তার একমাত্র টেনশন সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন(কেটলি)কে নিয়ে। ইতোমধ্যে সুমনকে মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা সমর্থন দিচ্ছে বলে প্রচার হওয়ায় এম এ লতিফ কিছুটা শঙ্কার মধ্যে আছেন। তবে সামাজিক এবং মানবিক নানা উদ্যোগের জন্য তিনি জনসাধারণের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একজন এমপি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এখানে আরও সাত প্রার্থী থাকলেও টেনশন বাড়াচ্ছেন নৌকা বঞ্চিত, সাবেক তিনবারের এমপি, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। তিনি এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে হয়ে স্বতন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে তোলার আভাষ দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী আবারও নৌকার কান্ডারী। কিন্তু এ আসনেও আরো ৭ প্রার্থীকে পিছনে ফেলে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকা আওয়ামী লীগের টিকেটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া আব্দুল জব্বার চৌধুরী ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দৌড়াচ্ছেন।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনটিতেও এবার জমে ওঠেছে নির্বাচনী হাওয়া। এখানে যথারীতি নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। কিন্তু এখানে নৌকা চেয়ে বঞ্চিত হওয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান বনফুলে এম এ মোতালেব (ঈগল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ইতোমধ্যে এখানে পাল্টা-পাল্টি শো-ডাউন ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে নদভী এবার সহজে উৎড়ে যাবেন এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আলোচিত-সমালোচিত এমপি মোস্তাফিজুর রহমান আবারও নৌকা নিজের করে নিয়েছেন। কিন্তু এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান(ঈগল), আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক) নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। হেভিওয়েট দুই বিদ্রোহী তার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় পদ-পদবী ও সুযোগ সুবিধা হারানোর ভয়ে অনেকে নৌকা কিংবা লাঙ্গলের বিরোধীতা প্রকাশ্যে না করলেও ভিতরে ভিতরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। ফলে নৌকা-লাঙ্গলের সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে ওঠার আভাষও মিলছে। ভোটার’রা মজা করে তাই নৌকাকে “ঈগল“ ছোঁবল মারতে চায় এমন রসিকতা করতেও দেখা গেছে। দলীয় স্বতন্ত্র না থাকা ৫টি আসন বাদ দিলে আরও আসন থাকে ১১টা। এই এগার আসনের মধ্যে ৭টিতেই দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক “ঈগল“। যেসব আসনে “ঈগল“ নৌকাকে ডুবাতে চায় সেগুলো হলো চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) চট্টগ্রাম-১২(পটিয়া) চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। অন্য চার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক হলো চট্টগ্রাম-৮(বোয়ালখালী) কেটলি, চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং)ফুলকপি,কেটলি, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) কেটলি, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ট্রাক।

উপরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে দলীয় স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী নেই। যে ১১টি আসনে স্বতন্ত্র দলীয় প্রার্থী রয়েছে তাদের ৭জনেরই প্রতীক “ঈগল“ এবং বাকী ৪জনের মধ্যে ৩জনের কেটলি, ২জনের ট্রাক প্রতীক রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by